ArabicBengaliEnglishHindi

‘মেড ইন চায়না-ফিনল্যান্ড’ লেখা থাকলেও ফোন তৈরি হতো গুলিস্তানে


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ৮, ২০২২, ৮:৫৬ অপরাহ্ন / ৬৯
‘মেড ইন চায়না-ফিনল্যান্ড’ লেখা থাকলেও ফোন তৈরি হতো গুলিস্তানে

নিজস্ব প্রতিবেদক ->>

রাজধানীর গুলিস্তানে অভিযান চালিয়ে নকল মোবাইল ও আইএমইআই পরিবর্তন করা কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ নকল মোবাইলফোন ও যন্ত্রপাতি উদ্ধার করেছে র‌্যাব-৩। এ সময় কারখানার মালিক ও নকল মোবাইল তৈরির মূল কারিগর মো. স্বপনকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়।

 

 

র‌্যাব বলছে, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার কোনো ধরনের অনুমোদন না থাকলেও দিনে ৫০টি মোবাইলফোন তৈরি হতো এ কারখানায়। দিনে ২০০টিরও বেশি মোবাইল বিক্রি করতেন স্বপন। বিভিন্নভাবে মোবাইলের যন্ত্রাংশ এনে স্বপনের কারখানায় নকল আইএমআই দিয়ে মোবাইলফোন তৈরি করা হতো, যা দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহক ও অপরাধীদের হাতে চলে যেতো।

সোমবার (৮ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সংস্থাটির মিডিয়া সেন্টারে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) সহযোগীতায় র‌্যাবের অভিযানে প্রায় এক হাজার ৫০০টি মোবাইলফোন, তিন হাজার ৩৭০টি নকল ব্যাটারি, ১২০টি হেডফোন, চার্জার ক্যাবল ৩৮৫টি, নকল চার্জার এক হাজার ১৫৫টি, সেলার মেশিন, হিট গান, মোবাইলফোনের ডিসপ্লে ৪৩টি, ইলেকট্রিক সেন্সর ১০টি, আইএমইআই কাটার মেশিন ১৩টি। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ ভুয়া আইএমইআই স্টিকার ও ভুয়া বারকোড জব্দ করা হয়।

 

মসজিদ নির্মাণ কাজে আর্থিক সাহায্যের আবেদন

 

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি বেসরকারি অফিসের পিয়নের কাজ করা স্বপনের ছোট বেলা থেকেই প্রযুক্তিগত দিকে আগ্রহ ছিল। একজনের মোবাইলফোন মেরামতের সূত্রে গুলিস্তান এলাকার এক মেকানিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর সেই মেকানিকের মাধ্যমে স্বপন জানতে পারেন মোবাইলফোন মেরামতের ব্যবসাটি লাভজনক। তখন তিনি বিনা বেতনে একটি সার্ভিসিং দোকানের মেকানিকের সঙ্গে কাজ শিখতে শুরু করেন। পরবর্তীসময়ে স্বপন মোবাইল সার্ভিসিংয়ের ওপর বেশ দক্ষতা অর্জন করেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে জানার জন্য অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও দেখেন। একপর্যায়ে স্বপন নিজেই ভিন্ন দেশ থেকে যন্ত্রাংশ এনে মোবাইল ফোন তৈরি ও আইএমআইহ নম্বর পরিবর্তনের কাজ শুরু করে।

তিনি বলেন, স্বপন প্রতিদিন ৫০টি মোবাইল তৈরি করতে পারেন। তার কারখানায় আরও কয়েজকজন সহযোগী ছিল। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে। স্বপনের কারখানায় তৈরি করা এ মোবাইল দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা কিনে নিতেন। তার কারখানায় তৈরি করা মোবাইল সিলার ও হিটার মেশিনের সহায়তায় মোবাইলের গায়ে মেড ইন চায়না, মেড ইন ভিয়েতনাম, মেড ইন ফিনল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের নাম লিখে আসল মোবাইলের মতো প্যাকেটিং করে বিক্রি করা হতো।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এসব মোবাইল বিটিআরসির ডাটাবেজে নিবন্ধিত না থাকায় মোবাইলগুলো বিক্রির পর অধিকাংশ মোবাইলফোনেই কোনো না কোনো সমস্যার কারণে গ্রাহক অভিযোগ করতেন। বারবার মোবাইল নষ্ট হওয়ায় গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হতেন। তখন মোবাইল মেরামতের আশা ছেড়ে দিয়ে নষ্ট মোবাইলটি আর ফেরত নিতে আসতেন না গ্রাহকরা। তখন ওইগুলো মোবাইল পুনরায় মেরামত করে নতুন গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতেন তিনি।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, স্বপনের কারখানায় তৈরি ১০ হাজার মোবাইল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়েছে। এই মোবাইল বিক্রির ৩০ লাখ টাকারও বেশি দিয়ে নিজ গ্রামে জমি কিনেছেন স্বপন। এসব নকল মোবাইল দিয়ে কথা বলা ছাড়াও বিভিন্ন কাজ করা যেত। মোবাইল কোনো অপরাধ চক্র অথবা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে কি না তা জানতে তদন্ত করছে র‌্যাব।