ArabicBengaliEnglishHindi

লোড শেডিংয়ের কারণে শিল্প কারখানার অবস্থা নাজুক


প্রকাশের সময় : জুলাই ১৫, ২০২২, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন / ৭৩
লোড শেডিংয়ের কারণে শিল্প কারখানার অবস্থা নাজুক

বিশেষর দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের দেশ গুলোর মধ্যে প্রথম শত ভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের দেশ বাংলাদেশ। বিদ্যুতায়িত এদেশটিতে আলোর ঝলকানির মাঝে সবকিছুই ঠিক ঠাক মতো চলছিল। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সাথে সাথে সারা বিশেষ এল এন জি গ্যাস ও জ্বালানি তেলের সংকট সৃষ্টি হওয়ায় সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। ২০২০ সালে যে গ্যাস প্রতি ইউনিট ৪ মার্কিন ডলারে নেমে গিয়েছিল, তা এখন বেড়ে ৩৮ ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সর্বশেষ ২৫ ডলারে কিনেছিল।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন করে গ্যাস কিনতে বাড়তি ব্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে। ফলে ধাপে ধাপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে ফেলা হচ্ছে। এল এন জি কেনা না হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে কি করে? আর এর প্রভাব পড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে। সেই সাথে শিল্প কারখানার উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের কিছু অংশ মিলিয়ে চারটি অঞ্চলে ১ হাজার ৪০০ টি শিল্প কারখানায় গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। শুধু গাজীপুরের চাহিদা ৬০ কোটি ঘন ফুট। কিন্তু গত ৪ জুলাই পাওয়া গেছে তার অর্ধেক ৩০ কোটি ঘনফুটের মতো।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ২৭ এখন তা বেড়ে ১৫২ টিতে দাঁড়িয়েছে। ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৫ হাজার মেগাওয়াটের কম, যা এখন ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্যসহ)। অবশ্য দেশে এত বিদ্যুৎ চাহিদা নেই। বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করে অনেক কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ভাড়া দেওয়া, বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা অধিকার সংগঠন গুলো এনিয়ে সমালোচনা করছে। আর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বিদ্যুৎ-খাতকে অদক্ষ বলে অভ্যাহিত করে এর সংস্কার চাইছে।

গ্যাসের অভাব বিদ্যুৎ উৎপাদনে সংকটের কারণে এখন রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মহানগরীতে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। আর গ্রাম গুলোর অবস্থা লোডশেডিংয়ের কারণে খুবই খারাপ। বিপাকে বাসাবাড়িতে রান্নার কাজ। কিন্তু সবচে খারাপ অবস্থা শিল্প কারখানা গুলোর। গ্যাসের স্বল্পতার কারণে গাজীপুরের তৈরি পোশাক, বস্ত্র ও নিটিং কারখানাগুলোর সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। গ্যাস সংকটের কারণে বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা মতো তৈরি পোশাক সরবরাহ করতে পারে না পারলে তারা ক্রয়াদেশ বাতিল করতে পারেন এবং বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে তারা অন্য দেশের দিকে ঝুঁকে পড়বেন।

তাই গ্যাস সংকট মোকাবেলায় কারখানাগুলো দিনে চালু রাখতে ব্যয়বহুল ডিজেলের প্রতি নির্ভর করছেন অনেকে। কিন্তু এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ৭০ শতাংশ। এ অবস্থা চলতে থাকলে উদ্যোক্তাদের পক্ষে প্রতিষ্ঠান চালু রাখা সম্ভব হবে না। কাজেই বিদেশ থেকে এল এন জি আমদানি না করে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাস আহরণের ব্যবস্থা দ্রুত করতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে শিল্প কারখানা গুলোর উৎপাদনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যা বহু আগে থেকেই জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। লোড শেডিংয়ের সব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে নিরবচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে হবে। তবে সামগ্রিক অবস্থায় দেখে মনে হচ্ছে, খুব সহসাই লোডশেডিং থেকে মুক্তি পাচ্ছে না জনগণ।