ArabicBengaliEnglishHindi

আমের দেশে পানের রাজত্ব


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২৭, ২০২২, ৮:৪৬ অপরাহ্ন / ৩০৭
আমের দেশে পানের রাজত্ব

সৈয়দ আ:হালিম মোহনপুর প্রতিনিধি রাজশাহী ->>
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় ১ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়। রাজশাহীর পানের চাহিদাও সারা দেশে ব্যাপকরাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় ১ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়। রাজশাহীর পানের চাহিদাও সারা দেশে ব্যাপক বাংলাদেশ।

জেলায় মোট ৪ হাজার ৪৯৯ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে পানের গড় ফলন ১৬ দশমিক ৯৩ মেট্রিক টন। জেলার ৭২ হাজার ৭৬৪ কৃষক পান চাষের সঙ্গে জড়িত। বছরে উৎপাদিত পানের দাম ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

‘রাজা নাই শাহী নাই রাজশাহী নাম, হাতি–ঘোড়া কিছু নেই আছে শুধু আম’—এ গানের কথাই বলে দেয় রাজশাহী হচ্ছে আমের দেশ। আমের পরিচয়েই রাজশাহীর পরিচয়। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, বছরে রাজশাহীতে আম থেকে যে আয় হয়, এর দ্বিগুণ আয় হয় পান থেকে।

পান এখন রাজশাহীর প্রধান অর্থকরী ফসল। চষিরা জানান, বরজে পান আছে মানে ব্যাংকে টাকা আছে। আর আম মৌসুমি ফসল। প্রাকৃতিক দুর্যোগে টিকিয়ে রাখতে পারলেই চাষির মুখে হাসি ফোটে। অথচ রাজশাহীর আম নিয়ে যত মাতামাতি, পান নিয়ে ততটা নেই। আম নিয়ে যত গবেষণা, পান নিয়ে তা হয় না। এ জন্য পানের এই অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোচনায় আসে না।

পানের কথা মেলে হারানো দিনের বাংলা সিনেমার গানেও। ‘যদি সুন্দর একটা মুখ পাইতাম, সদরঘাটের পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম।’ রাজশাহীর পানচাষিদের দাবি, সদরঘাটের এ পান রাজশাহী থেকেই যায়। আবার বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা গেয়েছেন, ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম…’।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় আমের চাষ হয় ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে। জেলায় ৮৬ হাজার ৬৭৫ জন চাষি আম চাষের সঙ্গে জড়িত। সব মিলিয়ে আম থেকে ৮০০-৯০০ কোটি টাকার বেশি আয় হয় না, কিন্তু পানে হয় এর দ্বিগুণ। জেলায় মোট ৪ হাজার ৪৯৯ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে পানের গড় ফলন ১৬ দশমিক ৯৩ মেট্রিক টন। জেলার ৭২ হাজার ৭৬৪ কৃষক পান চাষের সঙ্গে জড়িত। বছরে উৎপাদিত পানের দাম ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় ১ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়। মোহনপুরের বিরোহী গ্রামের পানচাষি দুখু মিয়া (৫২) সবচেয়ে ভালো পান চাষ করেন। তিনি বলেন, ‘পান ছাড়া অন্য কোনো ফসলে আমরা ভরসা পাই না। আমরা বলি, বরজে পান আছে মানে ব্যাংকে টাকা আছে। সারা বছর পান হয়। আম বা অন্য ফসল তো মৌসুমি।’

উপজেলার আরেক পানচাষি আলহাজ আলী জানান, রাজশাহীতে পান চাষ দিন দিন বাড়ছে। রাজশাহীর পানের চাহিদাও সারা দেশে ব্যাপক। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তাঁরা পান চাষে পরামর্শ ছাড়া আর কোনো সহায়তা পান না। তিনি মনে করেন, রাজশাহীতে আমে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। পানে গুরুত্ব দিলে চাষিদের লাভ আরও বাড়বে।

তবে রাজশাহীজুড়ে অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষিজমিতে পুকুর খনন বন্ধ না করা গেলে পান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

এসব বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কে জে এম আবদুল আওয়ালের সঙ্গে। তিনি বলেন, আম হচ্ছে ফলের রাজা। রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর পৃথক হওয়ার আগে এ অঞ্চল রাজশাহী হিসেবেই পরিচিত ছিল। আর সারা দেশে রাজশাহীর আমের সুখ্যাতি আছে। এ জন্য আম বললে রাজশাহীর কথাটাই প্রথমে দেশের মানুষের মনে আসে। এটা ঐতিহ্যের ব্যাপার।

আর পান প্রধান অর্থকরী ফসল তা ঠিক আছে, কিন্তু ফলের রাজা হওয়ার মতো আলোচনায় পান আসতে পারে না। রাজশাহীতে প্রধান অর্থকরী ফসল হলেও সারা দেশে তো পানের জায়গা কম।