ArabicBengaliEnglishHindi

ইটভাটার গ্যাসে জলসে গেল ২৫০ বিঘার ধান


প্রকাশের সময় : মে ১, ২০২২, ৭:০৮ অপরাহ্ন / ৭৯
ইটভাটার গ্যাসে জলসে গেল ২৫০ বিঘার ধান

স্বপন সরকার ->>
গাজীপুরের কালিয়াকৈর অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোয়ায় জলসে গেলাে প্রায় আড়াইশ বিঘা জমির বারো ধান। বছরের ধান গোলায় উঠানাের অনিশ্চয়তার মুখে জলসে যাওয়া ধানের ক্ষতি পূরণ নয়, ইটভাড়া বন্ধ চান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা । স্থানীয়দের অভিযোগ , হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব ইটভাটা গড়ে উঠায় প্রতি বছর ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে কৃষক ।

এলাকাবাসী, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের মহরাবহ এলাকায় অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ও কালাে ধোঁয়ায় চকে ও পশ্চিম চকের প্রায় আড়াইশ বিঘা জমির কাঁচা ধান জলসে গেছে। জলসে গেছে নারিকেল গাছ, সবজি বাগানসহ বিভিন প্রকার ফসলও। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও গ্রামবাসীর অভিযাগ, ওই এলাকার মেসার্স নাসির ব্রিকস ফিল্ডসহ কয়েকটি অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ও কালাে ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা ধান জলসে কৃষকের এমন ব্যাপক ক্ষতি হয়ছে। শুধু এ বছরই নয়, প্রতি বছরই এসব অবৈধ ইটভাটার মাধ্যম এমন ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে ওই এলাকার অসহায় কষক। হাইকার্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এক ফসলি, দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমিতে উপজেলার বিভিন এলাকায় চালানাে হচ্ছে প্রায় অর্ধশত অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটায় ফসলি জমি ও নদীর মাটি কেটে সর্বরাহ করায় জমির শ্রেনী পরিবর্তনসহ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে পরিবেশ। মানবদেহে ছড়াচ্ছে বিভিন রোগ বালাইও। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্ানীয় প্রশাসন চাহিদা মতো উৎকুচ না পাওয়াই মাঝে মধ্যে লােক দেখানাে অভিযান চালিয়ে দু-একটি চিমনি ভেঙ্গে দেয়া হয় । কি কয়েক দিন যেতে না যেতেই পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্ানীয় প্রশাসকে ম্যানেজ করে সেইসব ভাঙ্গা চিমনি রাঁতারাতি আবার ব্যবসা পরিচালনা করে ইটভাটার মালিকরা। এতে তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন সাধারণ কৃষক।

সরোজমিনে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলার বিভিন এলাকায় প্রায় ১০ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে বারাে ধান আবাদ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রায় বেশি ধান উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল। কি সম্প্রতি মহরাবহ এলাকায় অবস্তি মেসার্স নাসির ব্রিকস্‌ ফিল্ডসহ কয়েকটি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ও কালা ধোঁয়ায় আড়াইশ বিঘা জমির কাঁচা ধান জলসে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা। দুর থেকে পাকা ধান মনে হলেও জমির কাছে গেলেই দেখা যাবে পাতাসহ ধানগুলা পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শাজাহান মিয়া -দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস আমাদের যা কাচা ধান গুলো পুড়ে গেছে । এমন পুড়া প্রতি বছরই পুড়ছে। কৃষি অফিসসহ স্ানীয় প্রশাসন কেউ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা ক্ষতিপূরণ চাই না, আমরা চাই কৃষি জমি থেকে একবারে ইটভাটা বন্ধ হােক। কৃষক সলিম হাসান বলেন, খেয়ে না খেয়ে এতো পরিশ্রম করে, ধার-দেনা করে সারা বছরের জন্য ধান গোলায় উঠানার চেষ্টা করি। আর সেই সােনালী ধানের স্বপ্ন জলসে দিলো অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ও কালাে ধােয়া । আগামী বছর বউ, ছেলে মেয়ে নিয়ে চলবো কিভাবে ?

সূর্য্যবানু বলন, সারা দিন চােখ মেলে তাকাতেও পারি না, তাকালেই ইটভাটার ধোয়া চোখে, মুখে ও নাখ দিয়ে ঢুকে পড়ছে এতে অসুস্থ হচ্ছে পরিবারের লোকজন ।
অভিযুক্ত মের্সাস নাসির ব্রিকস ফিল্ডর মালিক নাসির উদ্দিন কাঁচা ধান জলসে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, শুধু আমারই নয়, এখানে আরাে ইটভাটা আছে। ভাটার কারণে ধানের ক্ষতি হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ কৃষকদর ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিব । ফসলি জমিতে ইটভাটা কেন ? জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষক জমি দিয়েছে বলেই আমরা ইটভাটা করছি।

উপজেলা কষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, ইটভাটার গ্যাস ধান পুড়ে যাওয়ার বিষয় শুনছি। ইটভাটা বন্ধ করার ইখতিয়ার আমার নেই। ইটভাটার মালিকরা ডিসি অফিস আবেদন করলে আমরা লিখে দেয় ফসলি জমি। তারপরও কিভাব ইটভাটা হচ্ছে? তার জানা নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া চেষ্টা চলছে। আর তদত্ম করে ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে । এছাড়া ইটভাটার বিষয় হাইকাের্ট থেকে ডিসি স্যারকে তলব করছি। এর আগেই আমরা অভিযান চালিয়ে এসব ইটভাটা গুড়িয়ে দিয়েছি। আবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।