করোনা’র বিস্তার
প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৬, ২০২২, ১২:১৮ অপরাহ্ন /
১২৬
মুন্সী সাগর –
মানুষ সামাজিক জীব বলেই একাকী বাসকরা ভীষণ কষ্টকর
ও মনঃপীড়ার অন্যতম কারন। তারপরও কখনো কখনো উপায়হীন ভাবে একাকিত্বের কারাগৃহে নিজেকে মানায়ে নিতেই হয়। যাকে বলে বন্দীত্ব। অদেখা শত্রু করোনা’র রাহুগ্রাসে এলোমেলো জীবন,সমাজ
ও অর্থনীতি। সে অদেখা কিন্তু মহা শক্তিশালী। হরহামাশায় জীবন ছিনিয়ে নিচ্ছে এবং অহরহ। অতএব করোনাকে সম্মান করতেই হবে। যে সমস্ত জাতি এই করোনা’কে এর আগে গুরুত্ব সহকারে গ্রহন করেনি, তাদেরকেই এর খেসারত দিতে হয়েছে সবথেকে বেশী এবং সে খেসারত এখনো চলমান। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই আমাদেরকে বেঁচে থাকবার রাস্তা তালাস করতে হবে।
করোনা’র সবচেয়ে বড় চালাকি যে সে হুটকরে তার অবস্হান জানান দিচ্ছে না। যে তাকে দেখেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
সে আরো কিছু সংস্রব মানুষের ভিতর তার বিস্তার ঘটিয়েই তবে জানান দিচ্ছে; আমি এসেগেছি। ইতিমধ্যেই প্রথমজনের চিকিৎসা চলাকালীন, পুরো মহল্লায় তার দখলে এসেগেছে। এখানে বলাই বাহুল্য, যে যারা সেই এলাকায় মেহমান হয়ে বা অন্য কোন কাজে আসছে; তারাই আবার তাকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেই তারই এলাকাতে। আর এভাবেই করোনা জেকে বসছে পুরা দেশ তথা বিশ্বের আনাচ-কানাচ; তার বিশ্ববিজয়ের মহা উৎসব মিশনে।
পৃথিবীর শ্রেষ্টতম সুন্দর গ্রামখচিত আমার বাংলাদেশ এবং তারচেয়েও সুন্দর সৃষ্টিনন্দিত আমার গ্রামবাংলার রূপক,স্রষ্টার দ্যুত সবার অন্নদাতা শত কায়-ক্লেশেও দেশের উন্নয়নের কথা ভেবে যাঁরা এই মহান দায়িত্বে কখনোই অবহেলা করেনা সেই তাঁজসোনা আমার অহংকার স্রষ্টার শ্রেষ্ট উপহার শহুরে মানুষের উপেক্ষার পাত্র যদিও এদের ফলানো ফসল খেয়েই তারা বেঁচে থাকে,সেই পরম পূঁজনীয় আমাদের সোনার বাংলার রূপক কৃষক সমাজ তাদেরকে আন্তরিক সাধুবাদ। যে এই করোনা’র আধিপত্যবাদকে উপেক্ষা করে তাদের সেই গুরুদায়িত্ব অব্যাহত রেখেছেন। এরাই সেই কাজ পাগল,কাজে ডুবে থাকতেই ভালবাসে। হাট আর মাঠ এই নিয়েই গ্রাম্য মানুষের জীবন।
কিন্তু বে-হায়া করোনা এসেকি গ্রাম কি শহর,সমস্ত মানুষের কর্মময় জীবনটা আলেকজান্ডার’র ছিনতাই কাহিনীর নাটকে পরিণত করে রীতিমত ঝলসে দিয়েছে সকল সভ্যতার আলো। মানব সভ্যতার সূ্র্য তবে কী ঐ অস্তাচলের কৃষ্ণগহব্বরে সত্যিই ধাবমান? লক্ষলক্ষ জীবন যখন করোনা’র করালগ্রাসে স্তিমিত; তখনও আজকের বিজ্ঞান কেন অঙ্গুলি মুখে অসহায়! কিসের গর্ব তবে হে মানব? আমারই ভাই অথবা ভগ্নিকে বা যে ছিল আমার খেলার সাথী, তাকেই ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে মহাকালের গর্ভে। অথচ সেই চরম উৎকর্ষের দাবীদার আমার বিজ্ঞান কেন নির্বিকার! তৈরী করনা হে বিজ্ঞানী “করোনা” বিধ্বংসী সেই অস্ত্র। সমগ্র বিশ্বকে কিভাবে বন্দীত্বের অসহায় কারাগারে পরিণত করেছে। তোমরা কী দেখতে পাচ্ছনা, হে মানব বিধ্বংসী অস্ত্রের গর্বিত মহামান্য বিজ্ঞানীগণ!
গ্রামবাংলার যারা পরিশ্রমী মানুষ,সমাজ বদলের অর্থনৈতিক হাতিয়ার, তাঁরা কি বসেবসে দিন কাটাতে পারে? রাষ্ট্রীয় এমন অনেক প্রতিষ্ঠানই আছে যার কর্মচারীরা সেই দায়িত্বের বাইরে মানে বসে থেকেও নিয়মিত মাসোয়ারা ঠিকই পাচ্ছেন। কিন্তু এই গ্রামবাংলার কৃষিজীবী পরিশ্রমী মানুষগুলো এরা ঠিকই তাদের দায়িত্বে অটল থেকে রাষ্ট্রের অন্য সমস্ত মানুষের অন্নসংস্থান করে যাচ্ছে। এদের কোন ভাতা নেই,রোগ-শোকে কোন প্রণোদনাও নেই। রাষ্ট্র এদের কিছু দিতে গেলেই হাজারো ফঁড়ের আবির্ভাব হয় এবং শেষমেশ এদের ভাগে পৌছবার আগেই তা কোথা যেন গায়েব হয়ে যাই! তবুও এরা বেঁচে আছে,শরিরী সক্ষমতার জোরে। অথচ সেই তারাই জাতির মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছে অনেকটা নিঃস্বার্থভাবে। দেশের বোঁঝাটাই যেন এদের স্কন্ধে। বসে থাকলে শরীরে মোচড় মেরে ওঠে। কার অন্ন যেন ধব্বংশ করছি,নিরম্বু বসে থাকতে পারেনা। এই মানুষগুলোই প্রকৃত দেশদরদী। বসে খাইলে দেশ বাঁচবে তো! এইই তাদের দেশপ্রেম।
ধরে নিলাম, কোন মহল্লায় একজন করোনা’র রোগী আছেন।
সে নিজেও জানেনা যে সে করোনা আক্রান্ত। আর মহল্লাবাসীর তো জানবার প্রশ্নই আসেনা তার অসুস্থতার কথা। ফলে ইতিমধ্যেই তার সংস্পর্শে অনেকেই এসেছে অবাধে। হাচি-কাশি মানুষের চিরন্তন অভ্যাস। অতএব সন্দেহের কারণ তখনও ছিলনা। আমাদের বিপদের কারণটাই সেখানে লুকায়িত। করোনা’র আস্তানা যেহেতু ফুসফুস এবং
শ্বাসনালী এলাকায়, তাই করোনা খুব সহজেই হাঁচি-কাঁশির সাথে বের হয়ে আসে এবং তার সংস্পর্শে থাকা সমস্ত কিছুতেই ছড়িয়ে পড়ে অতি দ্রুত। হয়তোবা সে ভাইরাস আমার মধ্যে প্রবেশ করতে পারিনি।
কিন্তু সে আমার শরীরের কোথাও বা আমার ব্যবহারের কোন বস্তুতে অবশ্যই লেগে আছে। আমরা চুলকাতে অভ্যস্ত। তাই চুলকানো থেকে প্রথমেই লাগলো আঙ্গুলের ডগায়, আর সেই আঙ্গুল দিয়ে নাক পরিস্কার করলাম অথবা চোখ চুলকাতে পারি। এভাবেই করোনা প্রবেশ করছে মানব শরীরের কাংখিত আশ্রয়ে, আর প্রতিনিয়ত ঝুকিতে পড়ছে আমাদের জীবন। তাই অন্ততঃ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলবো,মাস্ক পরবো এবং তা ঠিকভাবে পরবো। ঘনঘন সাবান পানিদিয়ে হাত ধোবো, চোখও মুখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকবো।
করোনা ভাইরাস’র আক্রমণের ধরন কিন্তু আলাদা। সে যখন তখন প্রকাশ করেনা তার অস্তিত্ব। তবে, আশার বাণী এই সে বাতাসে উড়ে বেড়াইনা; তাই কোনরূপ সংস্রব ও সংস্পর্শ ছাড়া তার বিস্তার কোনভাবেই সম্ভব নয়। যেমন ডায়রিয়া ভাইরাস’র কথা যদি বলি—
সে শরীরে ঢুকলে অতি দ্রুত পাতলা পায়খানা বা বমি উভয়ই হতেপারে। তারমানে অতি দ্রুত তার অস্তিত্ব প্রকাশ করে। এমনও একদিন ছিল,এই আমারই দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপে গ্রাম থেকে অন্যগ্রাম উজাড় হয়েযেতো বিনা চিকিৎসায়। যেহেতু তখনও এই ডায়রিয়ার চিকিৎসা আবিস্কৃত হয়নি। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আমার দেশের এক বাঙ্গালী এই প্রাণঘাতী ডায়রিয়ার এমন সস্তা চিকিৎসা আবিস্কার করেন,যা ঘরে বসেই যে কেউই প্রস্তুত করতে পারে এবং বলতে গেলে বিনা টাকায় প্রস্তুত করা সম্ভব, সে হলো- লবণ-গুড় আর বিশুদ্ধ পানির দ্রবণ। যা খাবার স্যালাইন নামেও পরিচিত। যে রোগটা একদা ছিল মারাত্বক প্রাণঘাতী, বর্তমানে তার চিকিৎসার জন্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডাক্তারের প্রয়োজনও পড়েনা।
কিন্তু এইযে করোনা,কোন মানবদেহে প্রবেশ করলে সে আত্মপ্রকাশের জন্যেই সময় নিচ্ছে দুই থেকে চৌদ্দদিন পর্যন্ত। অতএব আমি করোনা আক্রান্ত হলেও আমার সংস্পর্শে আসা মানুষগুলো বুঝে উঠবার আগেই ছড়ায়ে যাচ্ছে এই ভয়ংকর করোনা। তাই আমরা নিজেরা যতক্ষণ সচেতন না হবো এবং করোনা’র যে সাধারণ বিধি না মেনে চলবো,ততক্ষণ নিস্তার নেই আমাদের এই অতি ভয়াবহ জীবন নাশকারী করোনা’র রাহুগ্রাস থেকে।
অতএব আমরা কেউই কারো বাড়ীতে যাবনা। এইজন্য যে, আমার করোনা থাকনা সে আমার মধ্যেই। আমার দ্বারা যেন অন্য কেহই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এমনকি নিজ পরিবারের লোকদের থেকেও অবশ্যই পৃথক থাকবো। কফ বা থুথু যেখানে সেখানে এবং যেনতেন ভাবে ফেলবো না। কেউ কারো জিনিষ পরিধান করবোনা। বাড়ি বা ঘরের ব্যাবহার্য জিনিষ, মাঝেমাঝেই জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার করে নেবো। প্রত্যেকেই মাস্ক ব্যবহার করবো যথানিয়মে। ঘনঘন সাবান পানি দিয়ে হাত ও মুখ ভালভাবে পরিস্কার করবো এবং নাক, মুখ ও চোখে হাতদেয়া থেকে বিরত থাকবো। কেউ অহেতুক এলাকা ত্যাগ করবোনা। বিশেষ কারণে যদি যাইও, ফিরে এসেই পরিধানের কাপড়চোপড় স্যাভলোন বা সাবান পানিতে ধুয়ে নেবো এবং নিজে অবশ্যই গোসল করে নেবো।
যদি আমরা এই মায়াবী পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যেতে না চাই, তবে অবশ্যই করোনা’র বিধি মেনে চলতে হবে আমাদেরকে। বাঙ্গালী পারেনা কি? এই ছ্যাঁচোড় করোনাকেও বিদায় করবোই, ঐ নির্লজ্জ পাকি হায়েনাদের যেভাবে বিতাড়িত করেছি, লাল-সবুজের বিজয় নিশান উড়িয়ে। এই যে করোনা? তোকেও তাজ্য করবো,শুধুই একটু সময়ের ব্যাপার। সত্যিই যদি তোর সম্মানবোধ থেকে থাকে; তো এখনও সময় আছে ভালোই ভালোই কেটেপড় !!
করোনা তুই আছিস কেন, এখনও মোর বাংলাদেশে?
জোরপূর্বক আর থাকিসনারে, নিঃস্ব তুই হবিই শেষে!
বাঙ্গলার মাটি দূর্জয় ঘাটি, তোরে কেন দেবোরে ঠাই
পতন তোর হবেই করোনা,টিকে থাকবার উপায় নাই।
তারা সবাই আজ বিতাড়িত- পাকিহায়েনা ঐ লুটেরা
অসীম সাহসী বাংলার মানুষ,কূলী-মজদুর ও মুটেরা।
করোনা তোরে সময় দিলাম, পালায়ে যাবি যা এখন
বাংলা ছেড়ে যা চলে যা, এই-ই যে তোর শেষ লগন।
তুই করোনা আর একটা জীবন, যদি করেছিস নাশ
আফসোসেরও সময় পাবিনা,গুষ্টিতোর হলে বিনাশ।
যেথাহতে এসেছিস বঙ্গে, সেথায় আবার যা ফিরেযা
বার আওলিয়ার এই মাটিতে,তোর আর ঠাই হবেনা!
বাংলার মাটি দূর্জয় ঘাটি, দুষ্টু দেবতাও পালায়ে যাই
শান্তির স্বর্গ! দুষ্টর নরক,মহাবিশ্বে এর তুলনা কি হয়?
ভাগ্যবিধাতা বাংলার সাথী তারই সাথে বেহায়া খেলা
ভালোই ভালোই কেটেপড়,নইলে বুঝবি বঙ্গের ঠেলা!
আপনার মতামত লিখুন :