গ্রাম হবে শহর এই পরিকল্পনায় বদলে যাচ্ছে বারহাট্টার প্রতিটি গ্রাম
প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২২, ৫:২৩ অপরাহ্ন /
৯৪
নেত্রকোনা প্রতিনিধি ->>
উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের দৃশ্যপট।
গ্রামে এখন প্রতিটি ঘরেই বিদ্যুৎ রয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ খাতেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। শহরের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলছেন গ্রামের মানুষ।
এ উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়কই পিচঢালা। এখন আর কাঁচা বা মাটির ঘর তেমন চোখে পড়ে না। অধিকাংশ বাড়ি পাকা ও আধাপাকা। শহরের মতোই রাতের অন্ধকার দূর করতে গ্রামের সড়কের মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে সোলার ল্যাম্পপোস্ট।
প্রযুক্তির দিক দিয়েও পিছিয়ে নেই বারহাট্টা উপজেলা। এখন বিনা পয়সায় বিভিন্ন ধরনের সেবা মিলছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে।
এছাড়া ভূমিহীন-গৃহহীনরা পাচ্ছেন সরকারি ঘর। স্বল্প সুদে মিলছে ঋণ। এখন পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বিভিন্ন কাজ করছেন। এতে পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।
বারহাট্টা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহাম্মদ বাবুল মনে করেন, সরকারের গৃহীত নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণেই প্রত্যন্ত গ্রামে এ পরিবর্তন হয়েছে। গ্রামের মানুষ এখন আর কৃষিকাজ নিয়েই থাকেন না। অনেকেই বিভিন্ন ধরনের পেশা বেছে নিয়েছেন।
তিনি বলেন,এক সময় উপজেলার সাহতা,ডেমুরা,বাউসী, প্রেমনগর ছালিপুরা, নিচিন্তুপুর, আসমা, রায়পুর, চিরাম, ও সিংধা আলোকদিয়াসহ বেশিরভাগ গ্রামই অবহেলিত ছিল। এসব গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন ভালো ছিল না। বর্ষায় হাঁটু সমান কাদা থাকতো। বিদ্যুতের কথা চিন্তাই করা যেত না।
বারহাট্টা সদর ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক নেতা রতন চন্দ্র দাস বলেন, কাজকর্ম না থাকায় অনেক পরিবারের লোকজনকে অভাব-অনটনে দিন কাটাতে হতো। অথচ এসব গ্রাম এখন চেনাই যায় না।
বর্তমানে রাস্তাঘাট, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, কৃষি, স্বাস্থ্যসহ সব কিছুতেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি এসেছে। দারিদ্র্য জয় করে প্রতিটি পরিবার এখন উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছে।
সরেজমিনে ঘুরে একাধিক গ্রামে দেখা গেছে, রাস্তাঘাট খুব একটা কাঁচা নেই। সব গ্রামেই পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। বেশিরভাগ বাড়িঘর পাকা। বাড়ির পাশেই রয়েছে ক্লিনিক। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা।
উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম বলেন, এক সময় অন্যের জমিতে চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। উন্নত প্রযুক্তি জানা না থাকায় ফলন ভালো হতো না। এরপরও চাষ করা ছাড়িনি।
তিনি আরো বলেন, থাকার ঘর বলতে দুটি ছোট ঘর ছিল। মা-বাবা, স্ত্রীসহ ছেলে-মেয়ে নিয়ে আটজনের সংসার ছিল। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় ব্যবসা করে পাকাঘর তৈরি করেছি। কৃষি কাজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি।
এক গৃহিণী আমেনা বেগম বলেন, আমাদের এলাকায় স্কুল, রাস্তাঘাট না থাকায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলাম। বহু কষ্ট করে দুই ছেলে আর এক মেয়েকে ডিগ্রি পাশ করিয়েছি। এখন তারা চাকরি করছে। সরকারি সহায়তায় দিন দিন এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়ায় এখন গ্রামের অবস্থা পরিবর্তন হয়েছে।
সাহতা গ্রামের মো. জামিউল ইসলাম সাগর বলেন, এক সময় গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে খুবই দুর্বল ছিল। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না। সরকার গ্রামাঞ্চল উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেয়ায় এখন দৃশ্যপট পাল্টে গেছে।
মৎস্যজীবী মো. জলিল মিয়া বলেন, এক সময় পুকুর, খাল-বিলে তেমন মাছ চাষ হতো না। বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে মৎস্যজীবীদের মাঝে বরাদ্দ দেয়াসহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন।
বারহাট্টা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মাইনুল হক কাশেম বলেন, বারহাট্টা উপজেলার প্রতিটি গ্রামের রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে বদলে যাচ্ছে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা। প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ সুবিধা। বাড়ছে শিক্ষার আলো। ঘরে বসেই পাচ্ছেন ইন্টারনেট সেবা। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে ফলন ভালো পাওয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। এতে করে বিভিন্ন উন্নয়নের ছোঁয়ায় বারহাট্টা উপজেলা পেয়েছে নতুন যৌবন।
আপনার মতামত লিখুন :