ArabicBengaliEnglishHindi

জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুম নিয়ন্ত্রন করছে জেলা আঃলীগের সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রী


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২২, ৮:৫১ অপরাহ্ন / ৪৩০
জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুম নিয়ন্ত্রন করছে জেলা আঃলীগের সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রী

শরীয়তপুর প্রতিনিধি ->>
টাকা ছাড়া কোন সেবা মিলে না শরীয়তপুরের রেকর্ড রুমে। নিয়ন্ত্রনে করছে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রী।

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ড রুমটি ঘুষের কারখানায় পরিনত হয়েছে। এখানে প্রতিনিয়ত চলছে ঘুষ বাণিজ্য। ঘুষের কারণে শরীয়তপুর জেলার মানুষ রীতিমত হয়নরানির শিকার হচ্ছেন।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, জমির নকশা, পর্চা ও জমি সংক্রান্ত মামলার নথি তুলতে গেলে নির্ধারিত ফির চেয়ে ১৫ গুণ বেশী টাকা দিতে হয়। এ নিয়ে জনসাধারনের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রেকর্ড রুমের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদেরকে একাধিক বার অন্যত্র বদলী করলেও তারা তদবীর করে পূণরায় রেকর্ড রুমে চলে আসেন।
আরও জানা যায়, এ সকল ঘুষ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন শরীয়তপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে’র স্ত্রী সুজাতা রাণী দে এবং ফ্রন্ট ডেক্সে এর অফিস সহকারী সুচিত্রা রানী দে।

এ বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, রেকর্ড রুমের অনিয়মের বিষয়টি আমি জানি। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমার অফিসে দুর্ণীতি করে কেউ পার পাবে না। আগামী মার্চ মাস থেকে পর্চা নিতে আর আমার অফিসে আসতে হবে না। যাদের পর্চা বা অন্যান্য কাগজ প্রয়োজন তারা অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই তা তুলতে পারবেন।

গোসাইর হাট থেকে পর্চা দিতে আসা দলিল উদ্দিন বেপারী ও রেকর্ড রুম সুত্রে জানা যায়, জায়গা জমির নকশা, পর্চা, মামলার নথি নিতে প্রথমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ফন্ট ডেক্সে আবেদন করতে হয়। সেখানে আবেদন করতে ২০ টাকা ও ২ টাকা মূল্যমানের কোট ফি লাগাতে হয়।

মামলার নথি ও অন্যান্য কাগজের ক্ষেত্রে একই আবেদনের উপর ছোট -বড় অনুযায়ী ৫ টাকা দামের সর্বোচ্চ ৫০ টি পর্যন্ত ফলিও লাগাতে হয়। জায়গার নকশা বা মৌজার ম্যাপ এর জন্য ৫০০ টাকার ট্রেজারী চালান জমা দিতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের ফন্ট ডেক্সে আবেদন করলে সেবা প্রার্থীরা ৩ কর্ম দিবসের মধ্যে তাদেরকে সই মহরী কাগজ সরবরাহ করার কথা রয়েছে। সেবা প্রার্থীরা সকল বিধিমালা অনুসরন করে আবেদন করলেও তাদেরকে দিতে হয় নির্ধারিত ফির চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুন অতিরিক্ত টাকা।

রেকর্ড রুমে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ থাকলেও কেচি গেইট লাগিয়ে প্রকাশ্যে নেয়া হয় টাকা। সরকারী বিধি মোতাবেক সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অফিস খোলা রাখার নিয়ম থাকলেও রেকর্ড রুমে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে ঘুষ বাণিজ্য।

জেলা প্রশাসকের রেকর্ড রুমের কিছু অসাধু কর্মচারী ও দালালদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নগদ অর্থ পাওয়ার স্বার্থে সরকারী নির্দেশ অমান্য করে রেকর্ড রুমের সামনেই প্রকাশ্যে অর্থ লেনদেন করতে দেখা যায়। দালালদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য সেখানে সিসি টিভি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের নজর এড়াতে রেকর্ড রুমের সিসি টিভি প্রায়ই বিকল থাকে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রেকর্ড রুমের সামনে অবস্থান নেয়া এক দালাল বলেন, আমার নাম উত্তম কর্মকার। আমার বড় ভাই চন্দন কর্মকার। তিনি তুলাসার স্কুলের মাষ্টার ছিলেন। আমার বাড়ি আংগারিয়া। আমি সেটেল্টম্যান্ট অফিসে কাজ করি। রেকর্ড রুমে কাজ করে সুজাতা রানী দে, সে আমার মামাতো বোন হয়। আমি তার মাধ্যমে পর্চা তুলি। আমি পার্টির কাছ থেকে প্রতিটি পর্চা বাবদ ৫শ টাকা নেই। আমি দিদিকে দেই ৪শ টাকা। বাকী ১শ টাকা আমি রাখি।

নড়িয়া উপজেলার বাঐপাড়া থেকে আসা মামুন মৌলভী বলেন, আমি আমার জমির পর্চা নিতে আসছিলাম। আমি প্রথমে ফ্রন্ট ডেক্সে যোগাযোগ করি। ফ্রন্ট ডেক্সে বসা সুমিত্রা রানী আমাকে রেকর্ড রুমে কাজ করে সুজাতা রানীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। আমি সুজাতা রানীকে ৯টা পর্চার জন্য ৪ হাজার ৫শ টাকা দিলে তিনি আমাকে পর্চা তুলে দেন। যদিও পর্চা প্রতি সরকারী ফি ২০টাকা কিন্তু সুজাতা রানী আমার কাছ থেকে প্রতি পর্চা বাবদ ৫শ টাকা নিয়েছে।

সেবা নিতে আসা জাজিরা ইউনিয়নের দুর্বা ডাংগা এলাকার চান মিয়া বলেন, আমি শরীয়তপুর রেকর্ডরুমে গত ১০-১২ দিন ঘুরে দিদিকে ১২ শত টাকা দিয়ে তিনটি পর্চা তুলেছি।

গোসাইরহাটের আলাউলপুর ইউনিয়নের আব্দুস সোবহান মিয়া বলেন, আমি শরীয়তপুর রেকর্ড রুমে জাগয়া জমির ২ টি পর্চা নিতে এসে এক হাজার টাকা দিয়ে ও কয়েক দিন ধরে ঘুরছি। কিন্তু এখন ও কাগজ পাচ্ছি না।

শরীয়তপুরের রেকর্ড রুমের রেকর্ড কিপার আবদুর রশিদ বলেন, আমরা পর্চা বা অন্যান্য কাগজ তুলতে অতিরিক্ত টাকা নেই না।

রেকর্ড রুমের অফিস সহকারী সুজাতা রানী দে বলেন, আমি কোন টাকা পয়সা নেই না। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা।