ArabicBengaliEnglishHindi

দর্শনার জয়নগর চেকপোষ্টে নমুনা না নিয়েই মিলছে করোনার নেগেটিভ সনদ


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৬, ২০২২, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন / ১১৯০
দর্শনার জয়নগর চেকপোষ্টে নমুনা না নিয়েই মিলছে করোনার নেগেটিভ সনদ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি ->>
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনার জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোষ্টের কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ উঠেছে। ভারত থেকে আগত এক যাত্রীকে করোনার নমুনা পরিক্ষা না করেই দেয়া হয়েছে নেগেটিভ সনদ। সেই করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ দেখিয়ে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। আবার টাকা নিলেও তার রশিদ দিচ্ছে না চেকপোষ্টে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা।

দর্শনা চেকপোষ্টে সব যাত্রীদের করোনার র‌্যাপিড এন্টিজেন টেষ্ট করার বাধ্যতামূলক। প্রতিজনের কাছ থেকে সে অনুযায়ী নেয়ার কথা ১০০ টাকা। তবে, অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিয়ে রশিদ দেয়া হচ্ছেনা, আবার নমুনা না নিয়েও করোনার নেগেটিভ সনদ দেয়া হচ্ছে বলেও এমন অভিযোগ আছে। আবার টাকা নিয়েও করা হয় না নমুনা পরীক্ষা।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোষ্ট দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারত থেকে দেশে আসেন বাংলাদেশী নাগরিক রেখা রানী সাহা। চেকপোষ্টে ঢুকেই স্বাস্থ্য বিভাগের হেলথ স্ক্রিনিং বুথে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা ছিল তার। কিন্তু তা করা হয় নি। তিনি বলেন, আমি দর্শনা চেকপোষ্টে ঢোকার পর আমার নিকট থেকে একশত টাকা নেয়া হয়।

কোন নমুনা ছাড়ায় আমাকে ‘নেগেটিভ’ রশিদ ধরিয়ে দেয় তারা। পরে ওনারা চলে যেতে বললো।
বাংলাদেশের আসা অপর দুই নারী যাত্রী বলেন, আমাদের দু‘জনের থেকে ২০০ টাকা নেয়া হয়েছে। নমুনাও নিয়েছে। তবে আমাদের টাকা নেয়ার রশিদ দেয় নি তারা।

এদিকে দর্শনা চেকপোষ্টের হেলথ স্ক্রিনিং বুথের রেজিষ্ট্রার খাতায় দেখা যায়, তালিকায় নমুনা না নেয়া রেখা রানী সাহার নামই নেই। তাহলে কিভাবে পেলেন করোনার নেগেটিভ সনদ, এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে কথা হয় হেলথ স্ক্রিনিং বুথে দায়িত্বরত কর্মকর্তা দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (স্যানিটারী ইন্সেপেক্টর) জামাত আলীর সাথে।

তিনি বলেন, ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। অতিরিক্ত যাত্রীদের ভীড়ে নমুনা না দিয়েই চলে গেছেন তিনি। আবার কোন কোন সময় ভীড়ের কারণে অনেক সময় রসিদ দেয়া সফল হয় না আমাদের।

আবার দু’একটা মিসও হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ক্যান্সার, স্কিন হার্ট ডিজিস রোগী এবং ১২ বছরের নিচে যারা আসেন তাদের ইমিগ্রেশনের সুবিধার্থে নেগেটিভ রিপোর্ট দিতে হয় বলে স্বীকার করেন তিনি।
স্থানীয় স্বাস্থ্য সচেতনরা বলেন, শুরু থেকে চেকপোষ্টের স্বাস্থ্যকর্মীরা বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছে।

নমুনা না নিয়ে করোনার নেগেটিভ সনদ দেয়া হয়েছে। এভাবে হলে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়বে। দায়িত্বদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবী করেন তারা।

দর্শনা ইমিগ্রেশন সুত্রে জানা গেছে, ১ জানুয়ারী থেকে ১৩ জানুয়ারী পর্যন্ত ভারত থেকে ১৮০৪ বাংলাদেশী নাগরিক, ১১২৬ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশ প্রবেশ করেছেন। বাংলাদেশ থেকে ১৩৩৭ বাংলাদেশী নাগরিক ও ১৭২৫ ভারতীয় নাগরিক ভারতে গিয়েছেন।

এরমধ্যে ১১ বাংলাদেশী এবং ১৩ ভারতীয় নাগরিকের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশী নাগরিকদের দেশে প্রবেশের অনুমতি মিললেও ভারতীয় নাগরিকদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় নি। তাদেরকে ভারতে পাঠানো হয়েছে।

দর্শনা ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ এসআই আব্দুল আলীম বলেন, দেশত্যাগ বা দেশে ঢোকার সময় অবশ্যই করোনা পরিক্ষা করাতে হবে। ভারতের কোন যাত্রীদের করোনা পজিটিভ হলে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয়। দেশের কোন যাত্রীর পজিটিভ হয়ে তাদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানো হয়ে থাকে।

তবে দেশত্যাগ বা দেশে ঢোকার সময় করোনা নেগেটিভ সনদ থাকতেই হবে। এখানে কোন দূর্নীতির সুযোগ নেই। আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগও করেনি। তবে টাকার বিনিময়ে করোনার সনদ এবং টাকা নিয়ে নমুনা পরিক্ষা না করেই নেগেটিভ সনদ দেয়া এটা স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাদের সাথে কথা বললে ভালো হয়। এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।

দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু হেনা জামাল শুভ বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ঘটনার সত্যাতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান বলেন, ভারতে আসা-যাওয়া প্রত্যেক যাত্রীদের করোনা পরিক্ষা বাধ্যতামূলক।

যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে থাহলে এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। ঘটনার সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।