ArabicBengaliEnglishHindi

দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্বে, শিক্ষার্থীদের কিশোর গ্যাংয়ের সৃষ্টি


প্রকাশের সময় : মে ২১, ২০২২, ৫:২৪ অপরাহ্ন / ৫৪
দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্বে, শিক্ষার্থীদের কিশোর গ্যাংয়ের সৃষ্টি

স্বপন সরকার, কালিয়াকৈর( গাজীপুর) প্রতিনিধি ->>

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় বিএনপির নেতাদের চতুর্মুখী দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে একটি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিবেশ। কখনও কখনও শ্রেণিকক্ষেই লাঞ্ছিত হচ্ছেন শিক্ষক ও ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন ছাত্রীরা। গুটি কয়েক ছাত্রের আচারণ যেন কিশোর গ্যাংয়ের মতো। বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিরাজ করছে আতঙ্ক। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শান্তি ফিরিয়ে সুষ্ঠ শিক্ষার পরিবেশ ফেরানোর দাবি শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার ভাউমান টালাবহ মডেল হাই স্কুলে এমন উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৩ সালে সূত্রাপুর ইউনিয়নের ভাউমান ও টালাবহ দুই গ্রামের লোকজন মিলেমিশে মনোরম পরিবেশে বিদ্যালয়টি স্থাপিত করেন। শিক্ষার মান উন্নয়নের ভুমিকা রাখায় ২০০৮ সালে এটি এমপিওভুক্ত করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টি সুন্দরভাবে পরিচালনা হয়ে আসছিল। কিন্তু গত প্রায় ৫/৬ বছর আগে প্রধান শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে শুরু শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের। এরপর আবার কার্যকরি পরিষদের কমিটিকে নিয়েও চলছে দ্বন্দ্ব।

এছাড়াও ওই বিদ্যালয়ে স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতা নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা করছেন। ওই নেতাদের উসকানি ও আশকারাতে দশম শ্রেণির ছাত্র নাহিদ হোসেন ও জুবায়ের হোসেনের নেতৃত্বে গুটি কয়েকজন ছাত্র যেন কিশোর গ্যাংয়ে পরিণত হয়েছে। গত ১১ মে ওই গুটি কয়েকজন ছাত্র ক্লাস চলাকালীন সময়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ঢুকে ওই ক্লাসের সহকারী শিক্ষক সোলাইমান হোসেনকে গালিগালাজসহ মারধরের চেষ্টা করে।

খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্যরা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। কিন্তু পরের দিন ১২মে তারা আবারো ৯ম শ্রেণিতে ঢুকে ওই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে। এর মাস খানেক আগেও টিফিনের সময় নাহিদ ও জুবায়েরসহ কয়েকজন ছাত্র ৮ম শ্রেণিতে ঢুকে ওই ক্লাসের দুজন ছাত্রীকে ইভটিজিং এবং শ্লীলতাহানি করে।

শুধু শ্রেণি কক্ষেই নয়, রাস্তা ঘাটে আসা-যাওয়ার পথেও তারা ছাত্রীদের ইভটিজিং করে। বিষয়টি জানতে পেরে প্রধান শিক্ষক হারেজ আলী ওই উশৃঙ্খল শিক্ষার্থীদের বের করে দিলে তারা তাকে হুমকি দেয়। পরে তাদের হুমকির মুখে ওই দিন বিদ্যালয় ছুটি দিতে বাধ্য হন প্রধান শিক্ষক হারেজ আলী।

এ সুযোগে বিএনপির কয়েকজন নেতার উসকানিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির দাবি তোলে মিছিল করে নাহিদ ও জুবায়েরসহ কিশোর দল। এমন কি তাদের ভয়ে সহকারী শিক্ষক সোলাইমান একা একা বাড়ি ও বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করতে পারছেন না। তাদের আচরণে এক মুহুর্তে মনে হবে এরাই যেন ওই এলাকার কিশোর গ্যাং।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লাঞ্ছিত ওই সহকারী শিক্ষক কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, যে কোনো সময় ওরা আমার ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এ জন্য একা একা চলাচল করতে পারছি না। ছাত্ররা যদি উশৃঙ্খল হয়, এরা যদি ক্লাস চলাকালে শ্রেণি কক্ষে ঢুকে শিক্ষককে মারধর করতে চায় এবং লাঞ্ছিত করে। তাহলে কি আর সম্মান থাকে? তাদের ভয়ে অভিযোগও দিতে পারছি না। তবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শান্তি ও সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ ফেরানোর দাবি শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর।

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারেজ আলী জানান, শ্রেণি কক্ষে প্রবেশ করে ছাত্রীদের ইভটিজিং ও শিক্ষক লাঞ্ছিত করে কয়েকজন উশৃঙ্খল শিক্ষার্থী। এ জন্য কয়েকজন ছাত্রকে মৌখিকভাবে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং তাদের অভিভাবক নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। তাই তারা কয়েকজন প্রভাবশালীর উসকানিতে আমার বিরুদ্ধে মিছিল করে। এসব বিষয় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাকির মোল্লা জানান, ইভটিজিং ও শিক্ষক লাঞ্ছিতসহ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় তদন্তাধীন আছে। তবে তদন্ত করে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।