ArabicBengaliEnglishHindi

দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে চালু হচ্ছে ডিসেম্বরে


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ৩, ২০২৩, ৬:৫৭ অপরাহ্ন / ২০৯
দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে চালু হচ্ছে ডিসেম্বরে

নিজস্ব প্রতিবেদক ->>
কক্সবাজার বিমানবন্দরে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের দীর্ঘতম ১০ হাজার ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে রানওয়ে। বোয়িং ৭৭৭ ও বোয়িং ৭৪৭ এর মতো বড় প্লেন ওঠানামা করবে এ বিমানবন্দরে।

এটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রানওয়ের কাজ বাস্তবায়নকারী চীনের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিইসিসি) সাইট ম্যানেজার লি গুয়াংকি জানান, এ পর্যন্ত প্রকল্পটির প্রায় ৭৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তিনি জানান, আমাদের লক্ষ্য হলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা। চলতি বছরের মধ্যে আমরা রানওয়েসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের আশা করছি। বাকি কাজ আগামী বছরের ১০ মে এর মধ্যে শেষ হবে। রানওয়েটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘতম রানওয়ে। এর দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১০ হাজার ৭০০ ফুট। রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের বর্তমান দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ হাজার ৫০০ ফুট।

জানা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জরুরি যুদ্ধবিমান বিমানবন্দর ওঠানামার জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার শহরের বাঁকখালী নদী ও সাগর তীরবর্তী ২৩০ একর জমিতে গড়ে তোলে কক্সবাজার বিমানবন্দর। পরে ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান আমলে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। স্বাধীনতার পরে কয়েক ধাপে উন্নয়নের পর এ বিমানবন্দরকে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হয়। ২০১৭ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা করেন।

ওইদিন প্রধানমন্ত্রী বোয়িং ৭৩৭ প্লেন যোগে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করে এ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের শুভ উদ্বোধন করেন। প্রথম পর্যায়ে এ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ছয় হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে নয় হাজার ফুটে উন্নীত করা হয়। রানওয়ের প্রশস্ত ১৫০ ফুট থেকে ২০০ ফুটে উন্নীত করা হয়। এ ছাড়া রানওয়ের শক্তি বাড়িয়ে এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়। তবে আন্তর্জাতিক রুটের কোনো প্লেন এখন সরাসরি কক্সবাজার থেকে চলাচল করছে না। এরপর ২০১৯ সালে সরকার এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি প্রকল্প হাতে নেয়। যার লক্ষ্য ছিল বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে নির্ঝঞ্ঝাট ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়া।

এরপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রানওয়ের দৈর্ঘ্য সম্প্রসারণ করে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করার জন্য বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চীনের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিইসিসি) সঙ্গে চুক্তি করে। এ কোম্পানি চীনের আরেক প্রকৌশল কোম্পানি চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরোকে (সিওয়াইডব্লিউসিবি) সঙ্গে নিয়ে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেছেন। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তারা জানান, বিমানবন্দরটিকে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাসহ একটি আঞ্চলিক বিমান চলাচল কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য বিশদ নকশা তৈরির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তারা।

প্রকল্প সমন্বয়কারী মোশাররফ হোসেন বলেন, রানওয়ের জন্য সমুদ্র থেকে প্রায় ৫২০ মিটার (প্রায় ১৭০৬ ফুট) ভূমি পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং প্লেন অবতরণের সুবিধার্থে আরও ৬০০ মিটারে (১৯৬৮ ফুট) লাইট স্থাপন করতে হবে। এ ছাড়া সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে পুনরুদ্ধার করা জমির চারপাশে বোল্ডার এবং কংক্রিট ব্লক স্থাপন করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণসামগ্রী লোড-আনলোড করার জন্য একটি অস্থায়ী জেটিও নির্মাণ করেছে। প্রকল্প পরিচালক মো. ইউনুস ভূঁইয়া জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ১০ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে টার্মিনাল ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ শেষ হবে। কক্সবাজার এয়ারপোর্ট থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ৩৯৬ কিলোমিটার। আকাশপথে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় যেতে সময় লাগে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট আর স্থলপথে যেতে সময় লাগে ১১ থেকে ১৬ ঘণ্টা।