ArabicBengaliEnglishHindi

নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধে চাই গণসচেতনতা


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২৭, ২০২২, ৩:২৮ অপরাহ্ন / ৯৩
নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধে চাই গণসচেতনতা

স্টাফ রিপোর্টার->>
নারী ও শিশু পাচার একটি সামাজিক সমস্যা । স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশ যদিও উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে এসেছে; তথাপি নারী ও শিশু পাচার একটি জটিল সামাজিক সমস্যা ও অর্থ উপার্জনের জঘন্য উৎস হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে। শিশু পাচারের মতো জঘন্য কাজটি যে কতভাবে সংঘটিত হতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বল্পোন্নত দেশের জনগণের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির অসাধু মানুষ পাচারের কাজে লিপ্ত হয়।

মধ্যযুগে মানুষকে যেভাবে ক্রীতদাসের মতো ব্যবহার করা হতো, বর্তমানে পাচারের মাধ্যমে ঠিক তেমনিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাচারকৃত শিশুদের পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়ে। পাচারের কারণে শিশুর সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবারের সুখ-শান্তি, আশা-আকাঙ্খাও শেষ হয়ে যায়।

পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মতো বাংলাদেশও জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষর করেছে। তারপরও এ দেশের শিশুরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীর অসহায়ত্বের সুযোগে একটি চক্র নারী ও শিশু পাচারের মতো জঘন্য কাজটি করে থাকে। এসব পাচারকারীচক্র নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। পাচারকারীরা পাচারের সময় নানাকৌশল যেমন: অপহরণ, প্রেম-ভালোবাসার ফাঁদ, সাজানো বিয়ে, ভালো চাকরির প্রলোভন, পুনর্বাসনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, প্রতিপালন করার প্রলোভন, আর্থিক সাহায্যের প্রলোভন, ভালো খেলনার প্রলোভন ইত্যাদি অবলম্বন করে থাকে।

গত ১০ বছরে শুধু ভারতেই প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশি নারী ও শিশু পাচার হয়েছে, যাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১২ থেকে ৩০ বছর। বাংলাদেশের যত শিশুর ক্ষেত্রে মিসিং বা ট্রাফিকিংয়ের ঘটনা ঘটে, এর মাত্র ২৭ শতাংশ দৈনিক পত্রিকায় ও ১২ শতাংশ টিভি নিউজে দেখা যায়। বিদেশি একটি চক্র দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় এক শক্তিশালী পাচার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, যারা নারী-শিশুসহ কিডনি পাচারে সক্রিয়। প্রতিবছর ২০ হাজার নারী ও শিশু ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হয়ে যায়।

এ দেশের সঙ্গে ভারতের ৪ হাজার ২২২ এবং মিয়ানমারের সঙ্গে ২৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর সীমানা দিয়েই পাচার হয় বেশি। যশোরের বেনাপোল, সাতক্ষীরার শাকারা, ভোমরা, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, কক্সবাজার, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছয়টি রুটসহ অন্তত ১৮টি রুট দিয়ে আশঙ্কাজনকহারে পাচার হচ্ছে নারী ও শিশু।

সম্প্রতি টিকটক, লাইকি, ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, ডিসকড, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে পাচারের জন্য নারীদের সংগ্রহ করা হচ্ছে। নিজস্ব দালাল নিয়োগ করেও নানা কৌশলে এ দেশ থেকে নারীদের পাচার করে দেওয়া হচ্ছে ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, কাতার, ওমানসহ বিভিন্ন দেশে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, এরকম ৩০টি বা তারও বেশি চক্র সারা দেশে বিস্তৃত রয়েছে। কিছু চক্র নারীদের গৃহপরিচারিকার চাকরির লোভ দেখিয়ে পাচার করছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে পাচারকারীদের বিচারের মুখোমুখি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া সম্ভব হলে পাচার দমন করা সহজ হবে। বাংলাদেশের দ-বিধি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-সহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলোর সার্বিক বাস্তবায়নে আমাদের কঠোর দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা কিংবা সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত, তাদের পাচারবিরোধী কার্যক্রমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। কোনো শিশুকে পাচারকারীর হাত থেকে উদ্ধার করার পর তার পুনর্বাসনের বিষয়টি অধিক গুরুত্বপুর্ণ। শিশুটিকে তার সমাজ বা তার পরিবার যেন স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে, তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শিশুটির স্বাভাবিক বিকাশ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।

এ বিষয়ে দৈনিক খবর বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ জাকির হোসেন মোল্যা বলেন, নারী ও শিশু পাচার জগন্যতম অপরাধ। এটা একটা দেশ ও জাতির জন্য  অভিশাপ।

শিশু অধিকার আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও পাচারবিরোধী কার্যক্রমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। এছাড়া নারী ও শিশু পাচারের সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করলে তা দেখে ভবিষৎ এ এমন জঘন্য কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে পাচারকারীরা নিশ্চয় নিজেকে বিরত রাখবে।