আন্তজার্তিক ডেস্ক ->>
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর রাশিয়ার ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা দেশগুলো। ফলে দেশটির খাদ্যশস্য বাণিজ্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তার ওপর কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে অতিমাত্রায় জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরো প্রতিকূল করে তোলে। এসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও গমের ক্রেতা খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছে না রাশিয়াকে। চলতি মাসের প্রথম ১৩ দিনে দেশটি প্রায় নয় লাখ টন গম রফতানির উদ্দেশে রাশিয়ার বন্দরগুলোয় লোড করা হয়। মার্চের মতো এপ্রিলেও রফতানিতে ঊর্ধ্বমুখিতা অব্যাহত আছে। খবর ওয়ার্ল্ড গ্রেইন ডটকম।
রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ গম রফতানিকারক দেশ। মোট বৈশ্বিক রফতানির ১৮ শতাংশই আসে দেশটি থেকে। গম রফতানি বাজারে রাশিয়ার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। যুদ্ধের কারণে ইইউ গম রফতানিতে রাশিয়াকে পেছনে ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু খাদ্যশস্য রফতানিতে রাশিয়ার চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা দেখে ইইউর রফতানি পূর্বাভাস কমাতে বাধ্য হয়েছেন বিশ্লেষকরা। মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) গত সপ্তাহেই রাশিয়ার গম রফতানি বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চলতি মৌসুমে দেশটি ৩ কোটি ৩০ লাখ টন গম রফতানি করতে সক্ষম হবে। যদিও যুদ্ধের আগে ইউএসডিএ ৩ কোটি ৫০ লাখ টন গম রফতানির পূর্বাভাস দিয়েছিল।
মস্কোভিত্তিক এগ্রিকালচারাল মার্কেট স্টাডিজের দেয়া তথ্যানুযায়ী, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে দেশীয় মুদ্রা রুবল ব্যবহার করতে হচ্ছে রাশিয়াকে। কিন্তু রুবলের বিনিময় মুল্য শক্তিশালী হয়ে ওঠায় এবং উচ্চ রফতানি শুল্কের কারণে আগামী মাসগুলোয় রাশিয়ার খাদ্যশস্য রফতানি শ্লথ হয়ে আসতে পারে। রাশিয়ান কোটার আওতায় ফেব্রুয়ারি-জুন পর্যন্ত ৮০ লাখ টনে সীমিত রাখা হয়েছে খাদ্যশস্য রফতানি। দেশটি থেকে যেসব দেশ গম কেনে তাদের মধ্যে অন্যতম মিসর, তুরস্ক ও ইরান।
কৃষিপণ্যের বাজার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইউক্রেন এগ্রো কনসাল্ট জানায়, রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দরগুলো এখনো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অন্যদিকে আজভ সাগরের বন্দরগুলোও কর্মমুখর হয়ে উঠছে। তবে কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধের ঝুঁকি থাকায় জাহাজীকরণ ব্যয় ৫০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর পরও আমদানিকারকরা অন্যান্য উৎসের তুলনায় রাশিয়ান গমের দাম আকর্ষণীয় থাকে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করছে। সর্বশেষ গমের টেন্ডারে রাশিয়া থেকে এক কার্গো গম বুক করেছে মিসর। যদিও ফ্রান্স এরই মধ্যে বেশ ভালো পরিমাণ গম দেশটি থেকে ক্রয় করেছে।
এদিকে যুদ্ধের কারণে ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমে গমের বৈশ্বিক বাণিজ্য কমার পূর্বাভাস মিলেছে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈরী আবহাওয়া, জ্বালানি সংকটসহ বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
মার্কিন কৃষি বিভাগের চলতি মাসে দেয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১-২২ মৌসুমে গমের বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ কোটি ১ লাখ টন। মার্চে ২০ কোটি ৩১ লাখ টনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।
ওয়ার্ল্ড এগ্রিকালচারাল সাপ্লাই অ্যান্ড ডিমান্ড এসটিমেটস রিপোর্টে ইউএসডিএ জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কাজাখস্তানের দুর্বল রফতানি পরিস্থিতির কারণে নিম্নমুখী বাণিজ্যের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার রফতানি বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা বাজারে সৃষ্ট ঘাটতি মোকাবেলায় সক্ষম হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :