ArabicBengaliEnglishHindi

পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারগুলো ভাষা গবেষণায় গুরুত্ব দেয়নি: প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২১, ২০২২, ১১:৩৭ অপরাহ্ন / ১৩৬
পঁচাত্তর পরবর্তী সরকারগুলো ভাষা গবেষণায় গুরুত্ব দেয়নি: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক ->>
১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা ভাষা গবেষণায় গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এর প্রতি প্রথম মনোযোগ দেয় বলে জানান সরকারপ্রধান।

সোমবার বিকালে ‘মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পরে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা আমাদের ভাষা বা গবেষণার বিষয়ে তেমন কোনো গুরুত্ব দেয়নি। বিজ্ঞানের চর্চা ও গবেষণা ছাড়া কখনো এগোনো যায় না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে আমি লক্ষ্য করেছি, গবেষণার জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। লক্ষ্যই তখন ছিল না। আসলে থাকবেই কী করে, সেটা আপনারা ভালোই বোঝেন। আমি সেই বিষয়ে আর বলতে চাই না।”

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গবেষণায় বরাদ্দ রাখে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কেবল সরকারে এসেছি। আর্থিক সংকট প্রবল। আমার মনে আছে প্রথমে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিই। পরের বছর যখন বাজেট করি, সেখানে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখি শুধু গবেষণার জন্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা গবেষণা শুরু করেছিলাম বলেই আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আজকে আমরা বিজ্ঞান চর্চা দিকেও এগিয়ে যাচ্ছি।”

১৯৯৬ সাল পূর্ববর্তী দেশে একটাই মোবাইল কোম্পানি ছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকা ছাড়া সারাদেশের মোবাইল ব্যবস্থা এনালগ ছিল, ডিজিটাল ছিলো না। ক্ষমতায় এসে প্রথমে মোবাইল উন্মুক্ত করেছি। তারপরে দেশে ডিজিটাল মোবাইল হয়, সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।”

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি অর্জনের জন্য সরকারের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের ভাষা দিবস না। সমগ্র বিশ্বের ভাষাভাষীদের মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীর অনেক দেশ এই দিবসটি পালন করে। এটা বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। কারণ জাতির পিতা বাংলা ভাষায় জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছিলেন। আমিও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাহান্ন সালে রক্ত দিয়ে ভাষা শহীদরা মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জনের জন্য রক্তের অক্ষরে লিখে দিয়ে যায়। বাঙালি জাতির জন্য রক্ত দিয়ে নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করার দিন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই কিন্তু ধাপে ধাপে আমাদেরকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপরিচয় পেয়েছি এবং স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি।”

প্রচলিত বিদেশি শব্দ ব্যবহারের পরামর্শ

কোনো বিদেশি শব্দের জটিল বাংলা পরিভাষা ব্যবহারের বদলে সহজ ও বহুল প্রচলিত বিদেশি শব্দ ব্যবহারের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “কনটেন্ট’ শব্দটার বাংলা পরিভাষা হলো ‘আধেয়’। এই বাংলা বললে কেউ কিন্তু বুঝবে না। কাজেই খটমট পরিভাষা ব্যবহার না করে মানুষ সহজেই বোঝে এমন বহুল প্রচলিত বিদেশি শব্দ ব্যবহার করা উচিত।

ইন্টারনেটে বাংলা ভাষায় কনটেন্ট তৈরির তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কম্পিউটার বা ইন্টারনেটে বাংলায় কনটেন্ট তৈরি করা বা বাংলা ভাষাকে আরও সহজ করে দেওয়া যায় কি না তা ভাবা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বাংলা কি-বোর্ড এসেছে, তবে সেগুলোকে আরও সহজ করে দেওয়া। বিশেষ করে আমাদের যুক্তাক্ষরগুলো এতো খটমট। এগুলোকে সহজ করার ব্যাপারে আজকেও আমি আমাদের মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছি। আমরা বাঙালি জাতি। আর এই ভাষা আন্দোলন থেকে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা সমান তালে এগিয়ে যেতে চাই।”

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. বেলায়েত হোসেন তালুকদার প্রমুখ।