মোঃ ইস্রাফিল ->>
আধুনিক ও টেকসই সড়কের নির্মাণের জন্য এবং সড়ক বিষয়ে নানা গবেষণা করার লক্ষ্যে উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশ সরকারও আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত গবেষণাগার নির্মাণের জন্য, রাজধানী ঢাকার পাইকপাড়ায় পুরাতন গবেষণাগারের প্রায় ৪২ একর জমির উপর দেশের তথা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম আধুনিক ও বিশ্বমানের সড়ক গবেষণাগার নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু, প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকায় বসবাসরত সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্যত্র আবাসন ব্যবস্থা চূড়ান্ত করতে না পারায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলছে ধীর গতিতে। তাই, নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কায় আছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমান সরকারের ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে মেগা প্রকল্পের আওতায়, স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। তারই ধারাবাহিকতায়, দেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম বাস্তবায়ন হলো, মেট্রো রেলের মতো আধুনিক ও বিশ্বমানের গনপরিবহন যোগাযোগ মাধ্যম। কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বন্দর, কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ দেশের সর্ববৃহৎ ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের প্রাথমিক সমীক্ষার কাজ প্রায় শেষের পথে। দেশের নানা প্রান্তের সড়ক- মহাসড়ক গুলো উন্নতি হচ্ছে -৪ লেন, ৬ লেন, ৮ আট লেনে। কিন্তু, অত্যন্ত হতাশার বিষয় এই যে, মেগা – প্রকল্প সহ সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণের এবং এর টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশে বিশ্বমানের কোন গবেষণাগার ও যন্ত্রপাতি নাই। তাই, সরকার আধুনিক ও টেকসই সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে বিশ্বমানের একটি গবেষণাগারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে
রাজধানী ঢাকার মিরপুরস্থ পাইকপাড়ার পুরাতন সড়ক গবেষণাগারের প্রায় ৪২ একর জমি বরাদ্দ দেয়। পহেলা সেপ্টেম্বর ২০২১ ইং সালে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের অধীনে– সাসেক রোড কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট -২ এর আওতায় এস্টাবলিশমেন্ট অফ রোড রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টার (আরআরটিসি) প্রকল্পের তৃতীয় অংশের মধ্যে প্রথম অংশের কার্যক্রম শুরু হয়।প্রকল্প বাস্তবায়ন ৩০ মাস ও অতিরিক্ত ১২ মাস সময় ধরে আগামী জুলাই ২০২৪ ইং সালে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হবে কল্পনা করা হয়। বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর যৌথ অর্থায়নে প্রায় দুইশত ৫১ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় । কনসালটেন্সি ফার্ম কেসিআই,কোদাই, গফ্, সুসাং,লাসা জেভি ও সহযোগী আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কনসালটেন্সি ফার্ম বিসিএল, বিইটিসি, ডিটিসিএল ও পিল্কওয়ে এর কনসালটেন্সিতে ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ যোগ্য ষষ্ঠ তলা রিসার্চ সেন্টার বিল্ডিং, সপ্তম তলা ট্রেনিং সেন্টার বিল্ডিং, তৃতীয় তলা টেস্টিং ল্যাব বিল্ডিং, দ্বিতীয় তলা ওয়েলফেয়ার বিল্ডিং, জেনারেটর-সাবস্টেশন বিল্ডিং এবং গেইট হাউজ বিল্ডিং নির্মাণ করার অনুমোদন দেওয়া হয়। ৯-ই সেপ্টেম্বর ২০২১ইং সালে দেশের অন্যতম স্বনামধন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই) লিমিটেডকে নির্মাণ কাজের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি ১২ ডিসেম্বর ২০২১ইং সালে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় ১৮ মাস অতিবাহিত হলেও প্রকল্পের কাজ দশ ভাগও শেষ করতে পারেনি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টরা।প্রকল্পের কাজ ধীরগতি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প ব্যবস্থাপক নির্বাহী প্রকৌশলী আশিক কাদির জানান-আমাকে যে জায়গায় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই জায়গাটিতে দীর্ঘদিন থেকে সড়ক ও জনপদের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের আবাসন হিসেবে বরাদ্দ দিয়ে রাখা হয়েছে। উক্ত জায়গায় প্রায় চার শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসা বরাদ্দ দেওয়া আছে এবং তাদের কেউ কেউ সরকারি জায়গা দখল অতিরিক্ত কিছু বাসা নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছেন।ফলে, তারা যেভাবে এখান থেকে অন্যত্র যেতে চাচ্ছেনা তদ্রুপ সরকারি বরাদ্দ পাওয়াদের অন্যত্র আবাসনের ব্যবস্থা না করে তাদেরকে উচ্ছেদ করাও যাচ্ছে না। উক্ত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকে অতিরিক্ত আরো ১৬ কোটি টাকা তাদের পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতিপূর্বে রাজধানীর বনানীতে তাদের আবাসনের জন্য সুন্দর একটা পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। কিন্তু, নানা মহলের সিদ্ধান্তহীনতার অভাবে ওই পরিকল্পনা থেকে আমাকে সরে আসতে হয়েছে। তাই তাদের অন্যত্র না সরিয়ে তাদের উচ্ছেদ করতে পারছিনা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকেও প্রকল্পের নির্দিষ্ট জমি বুঝিয়ে দিতে পারছিনা। ফলে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম ধীরগতি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন- ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মতে, রাজধানীর নাখালপাড়া সহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫৬ টি পরিবারকে স্থানান্তর করা গেছে। নির্বাহী প্রকৌশলী আক্ষেপ করে আরো বলেন, আমাকে কর্তৃপক্ষ যখন উক্ত প্রকল্পটির ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেন, আমি সানন্দে দায়িত্বভার গ্রহণ করি। কারণ, বরাবরই আমার মধ্যে একটা দুঃখবোধ কাজ করতো। আমাদের দেশে নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা গবেষণা করার উপযুক্ত সুযোগ না থাকার কারণে, বহি:বিশ্বের নানা দেশে গবেষণা ও উন্নত প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য তাঁরা চলে যান। তাদের লব্ধ জ্ঞান আমাদের দেশে মানসম্মত গবেষণার কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই তারা বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে থেকে যান। ফলে, আমাদের দেশের মেধা, ভিনদেশীরা তাদের উন্নয়নের জন্য কাজে লাগায় আর আমাদের দেশের সম্পদ ও তাদের পিছনে খরচ করা বিনিয়োগ ভেস্তে যায়। তাই বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাননীয় মন্ত্রীমহোদয় এবং মাননীয় সচিব মহোদয়কে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমাদের দেশেও উন্নত বিশ্বের ন্যায় আধুনিক ও বিশ্ব মানসম্পূর্ণ গবেষণাগার নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য।নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদৌ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবস্থাপনা প্রকৌশলী আশিক কাদির বলেন- নির্দিষ্ট সময় ৩০ মাসের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হলেও অতিরিক্ত আরো যে ১২ মাস ধরা আছে, সেই সময়ের মধ্যে ডে-নাইট দুই শিফটে কাজ করিয়ে আশা করছি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ করতে পারবো।
প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত কর্মচারী-কর্মকর্তাদের নানান সংগঠনের নেতাদের প্রভাবে এবং বাসা বরাদ্দ কমিটির অসাধু কর্মকর্তা- কর্মচারীদের যোগ-সাজেশে কিভাবে অনিয়ম করে অবৈধভাবে বাসা ভাড়া দেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন, অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে….
আপনার মতামত লিখুন :