তাহিরপুর(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি ->>
আগামী ৭ ফেব্রুয়ারী সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন পরিষদে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন থেকে সপ্তম ধাপে ১৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ২৯ ডিসেম্বর যার মধ্যে তাহিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর মাঠে নেমেছেন উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থীরা। নির্বাচনকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ভোটের মাঠ। এবারের নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী না দিলেও মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। তবে বিএনপির কিছু প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন। প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। প্রত্যেক প্রার্থীই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
তারা ভোটারদের কাছে গিয়ে তাদের আদর্শের আলোচনাসহ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন। মুখ খুলছেন পরিচিত দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থীরা দল বেঁধে প্রচার প্রচারণায় নির্বাচনী এলাকা সরগরম করে তুলছেন।
প্রার্থীরা আরামের ঘুম হারাম করে কনকনে শীত উপেক্ষা করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। প্রার্থীদের সাথে মাঠে নেমেছেন স্ত্রী-সন্তানরাও। সবার আশা ভোট যুদ্ধে জিততেই হবে। তবে সাধারণ ভোটাররা ভোট দেয়ার ব্যাপারে কোন প্রার্থীকেই নিরাশ করছেন না। প্রার্থীরা ব্যবসায়ী ভোটারদের দোকানে গিয়েও ভোট প্রার্থনা করছেন। শুধু তাই নয় মাঠে কর্মরত শ্রমিকদের কাছে ও যাচ্ছেন ভোটের আশায়।
দিচ্ছেন নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি। ১নং শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ভোটার দিলসাদ মিয়া বলেন প্রার্থীরা সবাই ভাল লোক। কাকে ভোট দেব তা এখনো মনস্থির করতে পারিনি। ১ নং ওয়ার্ডের ভোটার জমিলা বেগম জানান, বাবারে প্রার্থীদের আনা-গোনায় রাতে ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারি না। ২ নং ওয়ার্ডের ভোটার আতাউর রহমান জানান, ভোট আসলে প্রার্থীদের আনা-গোনার কমতি থাকে না।
ভোট শেষ হলেই তাদের দেখা পাওয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়ে সে মোতাবেক কাজ করে না। তারা নির্বাচনের পর সব ভুলে যান। ৯ নং ওয়ার্ডের ভোটার জোসনা বেগম বলেন, অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। কিন্তু এলাকার কোন উন্নয়ন হয় না।
ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা : সরেজমিনে পুরো উপজেলায় দেখা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাড়া-মহল্লার অলিগলি ও চায়ের দোকানগুলোতে চলছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা।
নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীরা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে কোমর বেঁধে নির্বাচনী মাঠে দিন-রাত সময় দিচ্ছেন। ভোটারদের সমর্থন আদায়ে দোকানপাট ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তবে এলাকার রাস্তাঘাটসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবেন এমন ব্যক্তিকেই ভোট দিতে চান ভোটাররা।
বীরেন্দ্রনগর এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী আব্দুল আলিম, শেখ মোস্তফা, রতনপুর গ্রামের উমর আলী, নূরজামালসহ এলাকার অনেকে জানান, সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবেন তারা। যিনি সুখে-দুঃখে সাধারণ মানুষের পাশে থাকবেন তাকেই ভোট দেবেন তারা।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক জানান, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৪৮ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ৩০২ জন এবং সাধারন সদস্য পদে ১০০ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোতাহার হোসেন আখঞ্জী শামীম (নৌকা), বর্তমান চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন, হোসাইন শরীফ বিপ্লব, বাচ্চু মিয়া, আতিকুর রহমান, জুনাব আলী।
বালিজুরি ইউনিয়নে মোঃ আতাউর রহমান (নৌকা), আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আজাদ হোসেন।
বাদাঘাট ইউনিয়নে মোঃ সুজাত মিয়া (নৌকা), এম সালমান আহমেদ সুজন, বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আপ্তাব উদ্দিন, বোরহান উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন, মোঃ সোহাগ মিয়া, গোলাম রব্বানী, সোহাগ মিয়া।
শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নে আবুল খায়ের (নৌকা), সালেহ আহমদ, আলী হায়দার, মোঃ শামছুল হক, খায়রুল বাশার, আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী আবুল হোসেন খান ও তার ছেলে আবুল কালাম খা।
শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ সরকার (নৌকা), মোঃ বাবুল মিয়া, মহিবুর রহমান রুবেল, মোফাজ্জল হোসেন, মহসিন রেজা মানিক, আলী আহমদ মোরাদ, মোঃ আলম, কৃষ্ঞ গোপাল তালুকদার মানব, মোঃ লুৎফুর রহমান।
বড়দল উত্তর ইউনিয়নে জামাল উদ্দিন (নৌকা), বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাসেম, মোঃ হোসেন আলী, মোঃ সিরাজ মিয়া, মাসুক মিয়া, এ কে নূর মিয়া, মোঃ শাহাব উদ্দিন, মলু হোসেন, মোঃ রুহুল আমিন
বড়দল দক্ষিণ ইউনিয়নে মোঃ সাইফুল ইসলাম (নৌকা), আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী মোঃ ইউনুছ আলী, মোঃ ইলিয়াছ আহমদ, মোঃ সবুজ আলম, মোঃ মাসুক মিয়া, সালেহ আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ১৫ই জানুয়ারি মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর বিধি ১৫ অনুসারে মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের শেষ তারিখ ১৮ জানুয়ারী, এবং দায়েরকৃত আপিল ২১ জানুয়ারী ২০২২ তারিখের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।
২২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ পাবেন। যাচাই বাছাই ও আপিল নিস্পত্তি শেষে ২৩ জানুয়ারী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :