বিশেষ প্রতিনিধি ->>
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জ¦ালানি তেল বিক্রি করে মুনাফা করার দিন শেষ। বিশ্ববাজারে তেলের দাম ক্রমে বেড়ে যাওয়ার বিপরীতে দেশে ওই অনুপাতে দাম বৃদ্ধি না করার কারণে খরচ মেটাতে সরকারের অর্থ বিভাগ ভর্তুকি দেবে। আর গত কয়েক বছরে বিপিসির পুঞ্জীভূত লাভের অর্থ যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করা হয়েছে, ওই প্রকল্পগুলোর কাজ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যেও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে দীর্ঘ ৭ বছর পর বিপিসি আগামী জুলাই থেকে ভর্তুকির টাকা পেতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সূত্র জানায়, বিগত সাত বছরে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে জ¦ালানি তেল কিনে দেশে তা অপেক্ষাকৃত বেশি দামে বিক্রি করে বিপিসি বেশ মুনাফা করেছে। ওই সময়ে বিপিসিকে কোনো ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন পড়েনি। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে গেছে। ফলে বিপিসি খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী পহেলা জুলাই থেকে পুনরায় বিপিসিকে ভর্তুকির টাকা দেয়া শুরু হবে।
আর বিপিসিকে ভর্তুকির টাকা দেয়া শুরু হলে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ঘাটতি বাজেটে চাপ তৈরি হবে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যস্ফীতি কমে এলে দেশের বাজারেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তখন হয়তো আবার ভর্তুকি দেয়া বন্ধ করা হবে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জ¦ালানি তেল বিক্রি করে বিপিসিকে ২ হাজার ৩২১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে ২০১৪-১৫ সালে বিপিসিকে লোকসান গুনতে হয়নি। বরং ওই অর্থবছরে বিপিসি লাভ করে ৪ হাজার ১২৬ কোটি ৮ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯ হাজার ৪০ কোটি ৭ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ হাজার ৬৮৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ হাজার ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরের ৮ মে পর্যন্ত ১ হাজার ২৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা লাভ করে। আর সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকার বিপিসিকে ৬০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতি লিটার ডিজেলে এখন ৪৪ টাকা ৪২ পয়সা লোকসান গুনছে বিপিসি। অকটেনে লিটার প্রতি আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩৪ টাকা। আর পেট্রোল ও জেট ফুয়েল বিক্রিতে লাভ-লোকসান নেই।
এ প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জানান, বিশ্ববাজারে বর্তমানে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ¦ালানি তেলের দাম বেশ চড়া। দেশের বাজারে লোকসান দিয়ে তেল বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার থেকে ভর্তুকি না পাওয়ার কারণে এখন নিজেদের মুনাফা থেকে জ¦ালানির বিক্রির লোকসানের টাকা সমন্বয় করতে হচ্ছে। সেজন্য ইতোমধ্যে সরকারের কাছে ভর্তুকি বাবদ অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় তাতে সম্মতি দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :