ArabicBengaliEnglishHindi

বৃক্ষরোপণ স্লোগান প্রতিষ্ঠা হোক


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৮, ২০২২, ১২:০৪ অপরাহ্ন / ১৪৩
বৃক্ষরোপণ স্লোগান প্রতিষ্ঠা হোক

বৃক্ষহীন পৃথিবীতে প্রানীর অস্তিত্ব অকল্পনীয়। গাছ আমাদের পরম বন্ধু ।পরমবন্ধু গাছ আমাদের দিয়েছে পড়নের কাপড়চোপড়,বেঁচে থাকার অক্সিজেন, নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার, বাসগৃহের উপাদানরূপে কাঠ – লতা -পাতা, আসবাবপত্রের প্রয়োজনীয় কাঠ ।এছাড়া পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাতেও গাছ বিকল্পহীন। তাই গাছ আমাদের বন্ধু এই শীর্ষক সম্বন্ধে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

প্রাচীন মানুষদের গাছপালার উপকারী জ্ঞান না থাকলেও গাছ পালার সংখ্যা কম ছিল না ।বরং চাহিদার তুলনায় বন- ভুমি অনেক বেশি ছিল।প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা বন গুলো বেঁচে থাকতো হাজার বছর ধরে।কালের পরিক্রমায় মানুষের জীবনযাত্রা আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক হচ্ছে যাহার দরুন গাছপালা কেটে তৈরী করছে বিলাসবহুল বাড়ি, কলকারখানা, হাটবাজার, হাসপাতালসহ অনেক কিছু।বাংলাদেশ ও তার ব্যতিক্রম নয়।প্রতিটি দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বন ভুমি থাকা জরুরী। কিন্তু বাংলাদেশর মোট আয়তনের শতকরা ১৭.৫ ভাগ বনভুমি,যেটা স্থায়ী নয় ।অধিক জনসংখ্যার দরুন দিন দিন সেই পরিমাণ কমতেই আছে।গাছপালা বৃষ্টিপাত হওয়ার জন্য অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে।যে স্থানে গাছপালা কিংবা বনভূমি পরিমানে বেশি সেই স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমান ও বেশি ।বৃষ্টিপাত মাটির গঠন ঠিক রেখে পরিবেশকে আদ্রও শীতল রাখে ।বৃষ্টির কারনেই গাছপালা মাটি থেকে সহজে পুষ্টিগুন টেনে নিয়ে বৃদ্ধি সাধন অক্ষুণ্ণ রাখে। এদিকে বৃষ্টিপাত ঠিক মতো না হলে দেশ একসময় মরুভূমি হয়ে যাবে।মুলত গাছপালা মাটির গভীর থেকে পানি ও খনিজ লবন শোষন করে, সেই পানি কিছুটা জৈবিক কাজে লাগে আর অতিরিক্ত পানি প্রস্বেদন হয়ে উপরে আকাশে উঠে যায়।সেখানে আবার ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি আকারে নেমে আসে।দেশকে মরুকরন থেকে রক্ষা ও পরিবেশ শীতল রাখতে বনাঞ্চল রক্ষা করা দরকার।

এছাড়া আমরা বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত যে অক্সিজেন নিচ্ছি সেই অক্সিজেন ও আসে গাছপালা থেকে ।প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমরা অক্সিজেন নেই আর নিশ্বাসের মাধ্যমে কার্বনডাই-অক্সাইড হিসেবে বিষাক্ত গ্যাস বেড় করে দেই,সেই বিষাক্ত গ্যাস গাছপালা গ্রহন করে পরিবেশের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখে।অক্সিজেন বেঁচে থাকার জন্য অতুলনীয় একটি উপাদান ।ঔষুধ শিল্পের প্রধান কাচামাল ভেষজ উদ্ভিদ, এক সময় মানুষের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় গাছের বিভিন্ন অংশ রস করে খেয়ে রোগ উপসম করতো । প্রাচীন মানুষ বিদ্যাশিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও গাছপালার ঔষুধী ব্যবহার ঠিকই জানতো ও প্রয়োজনে ব্যবহার করতো।গাছপালার ভুৃমিকা লিখে শেষ করার মতো বিষয় নয়,এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

আজ করোনাভাইরাসে সারা বিশ্বের দিকে তাকালে বিষয়টি বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা না।হাসপাতাল গুলাতে অক্সিজেনের সংকটের কারনে করোনা রোগীরা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটছে, অক্সিজেনের জন্য স্বজনদের কতই হাহাকার। অক্সিজেনর অভাবে মানুষ স্বজন সম্মুখেই মারা যাচ্ছে, মা নিজের মুখে মুখ লাগিয়ে শিশুকে অক্সিজেন নিতে সহায়তা করছে।এ সব কিছুই পরিস্থিতি আমাদের স্মরন করিয়ে দেয় গাছপালা আমাদের কত উপকার করে। এছাড়া উদ্ভিদ বায়ু থেকে অনেক বিষাক্ত গ্যাস ও নিষ্ক্রিয় করে পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখে ।গাছপালার ওষুধী গুনাগুনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। সৃষ্টিকর্তা প্রায় সকল রোগের প্রতিষেধক গাছপালায় দিয়েছেন। কেউ কেউ গাছপালার স্টার্ক সরাসরি প্রতিষেধক হিসেবে গ্রহণ করে আবার কেউ সিনথেটিক মেডিসিন ব্যবহার করে। সিনথেটিক মেডিসিনে বিভিন্ন কেমিক্যাল থাকায় পার্শপ্রতিক্রিয়ার একটা বিশাল সম্ভাবনা থেকেই যায়, যেখানে সরাসরি গাছপালার বিভিন্ন উপাদান অংশ গ্রহণ করায় পার্শপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে বরং বাকি উপাদানগুলোও তুলনামূলক গুরুত্বপূর্ণ।

সিনথেটিক মেডিসিনের পরিবর্তে যারা সরাসরি উদ্ভিদের পার্ট ব্যবহার করে তারা অনেক শক্তিশালী হয়। বিশেষ করে উপজাতিদের দিকে লক্ষ রাখলে দেখা যায় যে তারা এখন প্রাচীনমানুষের মতো গাছপালার ঔষুধ গুনাগুন সরাসরি গ্রহণ করে ফলে তাদের শারীরিক গঠন ঠিক থাকে এবং বৃদ্ধ বয়সেও কর্মট থাকে।
গাছপালার ভুমিকা সবখানেই,তাই আমাদের গাছপালা সম্পর্কে আরো বেশি সচেতন হওয়া উচিত।
এতো উপকারের কথা উপেক্ষা করেই বৃক্ষ নিধন অব্যাহত আছে।কৃষি জমির পরিমান বাড়াতে ও অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য আবাসস্থল তৈরীতে ধ্বংস করা হচ্ছে বন।সাম্প্রতিক বহুল আলোচিত চট্টগ্রাম সি আর বি এলাকায় মেডিকেল স্থাপনের জন্য শতবর্ষী গাছ কাটার পরিকল্পনা করছে সরকার।সেই পরিবেশ নষ্ট করে মেডিকেল তৈরী করলে নগরীর পরিবেশর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।সরকারের পদক্ষেপ অন্য কোন ফাঁকা স্থানে মেডিকেল স্থাপন করলে চট্টগ্রাম নগরীর পরিবেশ বিপর্যের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আবহাওয়ার আচরণ বদলে গেছে। গরমের সময় ঠাণ্ডা, ঠাণ্ডার সময় গরম পড়ে। কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে,উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগের জীবানু সৃষ্টি হচ্ছে, এসব কিছুই হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।

পরিবেশ বাঁচাতে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। কোন জায়গা যাতে ফাঁকা না থাকে সেদিকে নজরদারি রাখতে হবে। সম্ভব হলে অফিস আদালতের প্রাঙ্গণে ও টিস্যু কালচার চারা টব করে লাগাতে পারি। বিপর্যের হাত থেকে রক্ষা করতে শুধু গ্রাম কিংবা সরক নয় বরং সরকারি-বেসরকারী অফিস স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গন কিংবা পতিত জমিতে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে একটি গাছ কাটার বিপরীতে তিনটি গাছ লাগাতে হবে এই স্লোগান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

 

মাসুম বিল্লাহ
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়