মোঃ ইস্রাফিল ->>
রাজধানী মিরপুরের দারুস সালাম এলাকার মাজার রোড জমিদার বাড়ি ওয়াকফ্ স্টেটের খেলার মাঠ দখল করে অবৈধভাবে মোটরযান স্ক্রাব অর্থাৎ পুরাতন গাড়ি কাটাকাটির মহোৎসবে মেতে উঠেছে শাহীন, কালাম, রুহুল সিন্ডিকেটরা। ওয়াকফ্ স্টেটের মুতাওয়াল্লী জাহাঙ্গীর আলম বাবলার সহযোগিতায়, স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় এলাকার কিছু পাতি মাস্তানদের যোগ-সাজেশে শাহিন গংরা সরকারি কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে, দীর্ঘদিন যাবত এই অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এতে এলাকার মানুষ যেভাবে হারাচ্ছে ছেলে-মেয়েদের খেলার মাঠ, সরকার হারাচ্ছে বিপুল অংকের রাজস্ব এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকার পরিবেশ হয়ে উঠেছে চরম বিষাক্ত।
মোটরযানের জীবন চক্রের পরিসমাপ্তি ঘটানোর জন্য বা ডিসপোজাল পদ্ধতি না থাকায় চলাচল অনুপযোগী অকেজো ঘোষিত, ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত মোটরযান সড়ক/ মহাসড়কে চলাচল করছে এবং সড়ক নিরাপত্তা বিঘ্নিতসহ পরিবেশের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। স্ক্রাব করার মাধ্যমে এসব মোটরযানের জীবনচক্র পরিসমাপ্তি ঘটালে একদিকে যেমন সড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে। যেগুলো ইতিপূর্বে বিআরটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের সম্মিলিত কর্তৃপক্ষের উপর ন্যাস্ত ছিল। বর্তমানে যা সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ধারা ১২৪ (থ) মোতাবেক “মোটরযান স্ক্রাব নীতিমালা ২০২৩” খসড়া ভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে এবং জনমত যাচাইয়ের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
এসব কোন নিয়ম-নীতি না মেনে রাজধানী মিরপুরের দারুস সালাম থানাধীন মাজার রোডের মাথা সংলগ্ন জমিদার বাড়ি ওয়াকফ স্টেটের খেলার মাঠ দখল করে দীর্ঘদিন ধরে, শাহীন, কালাম, রুহুল আমিনদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট অবৈধভাবে বিভিন্ন ধরনের মোটরযান কাটাকাটি করে আসছে। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন খেলার মাঠ পুরো অর্ধেক দখল করে যত্রতত্র অবস্থায় পাশাপাশি তাদের লোকজন মোটরযান দেদারসে কেটে যন্ত্রাংশের বিভিন্ন অংশ স্তুপ করে রাখছে। এতে অত্র অঞ্চলের পরিবেশ ধোয়া, ধুলি-বালিতে ভারী হয়ে উঠছে। আরো দেখা যায়, মোটরযানের সকল যন্ত্রাংশগুলোই তারা ঘষা-মাজা করে, মাঠের সামনে তাদের প্রত্যেকের হার্ডওয়ার এর দোকানগুলোতে আবার বিক্রি করার জন্য সাজিয়ে রাখছে। অর্থাৎ যে যন্ত্রাংশ গুলোর জীবনকাল শেষ হওয়ার ফলে স্ক্রাব করা হলো, সেগুলোই ঘুরেফিরে আবার কোন না কোন মোটরযানের যন্ত্রাংশ হিসাবে যুক্ত হচ্ছে। এতে মোটরযানগুলো যেভাবে দ্রুত বিকল হচ্ছে এবং সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানায় যে, এখানে শুধু অকেজো মোটরযান-ই কাটা হয় না, বিভিন্ন সময় চোরাই মোটরযান কাটা হয় এবং এরা আন্তজেলা গাড়ি চোর চক্রের সাথে যুক্ত থেকে এই চোরাই গাড়িগুলো এখানে কেটে আলাদা আলাদা যন্ত্রঅংশ বিক্রি করে থাকে। কিছুদিন পূর্বে এই সিন্ডিকেটের প্রধান শাহীন, চোরাই যন্ত্রাংশ কেনার অপরাধে ঢাকা মহানগর ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডি বি)কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে ছিলো, বর্তমানে সে জামিনে আছে।
মোটরযান স্ক্রাব সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা মোহাম্মদ রুহুল আমিন ওরফে রুহুলকে মোটরযান স্ক্রাব বা কাটাকাটি আপনারা বৈধভাবে করছেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে, তিনি এক কথায় বলেন- আমরা এখানে যা কিছু করছি সবকিছু অবৈধ।মোটরযান স্ক্রাব এর আরেক হোতা মোহাম্মদ কালামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি জানান – আমরা বিভিন্নভাবে কাগজ-পত্র তৈরি করতে চেষ্টা করতেছি কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউই আমাদের কোন অনুমতি বা অনুমোদন দিচ্ছেন না। কোনরূপ অনুমোদন ছাড়া এমন ব্যবসা পরিচালনা করা যায় কিনা এমন প্রশ্ন করলে, তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি। এখানে চোরাই মোটরযান স্ক্রাব বা কাটাকাটি করে নিমিষেই ভাঙ্গারিতে রূপান্তর করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি চোরাই গাড়ি বা মোটরযান কিনি না এবং চোরাই গাড়ি কাটাকাটিতে যুক্ত নই। অন্যরা এর সাথে যুক্ত আছে কিনা সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
মোটরযান স্ক্রাব সিন্ডিকেটের নিয়ম- নীতি উপেক্ষা করে স্ক্রাব বা কাটাকাটি করা বিষয়ে কর্তৃপক্ষের মতামত ও এ পর্যন্ত কি পরিমান চোরাই গাড়ি স্ক্রাব করা হতে পারে এবং মাঠের আর এক পাশে শামসুল হক শামসু কিভাবে পোড়া মবিল থেকে অবৈধভাবে ব্র্যান্ডেট কোম্পানির মবিল তৈরি করে তার বিস্তারিত জানতে এবং অবৈধ কাজের সাথে যুক্ত সিন্ডিকেটের ছবিসহ দেখতে চোখ রাখুন প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে!
আপনার মতামত লিখুন :