ArabicBengaliEnglishHindi

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাংবাদিকের ছদ্মবেশে ১৭ বছর


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০২২, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন / ১১৮
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাংবাদিকের ছদ্মবেশে ১৭ বছর

এনামুল হক শামিম ->>
সাংবাদিক ছদ্মবেশে ১৭ বছর যাবত পলাতক হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল (৪৭) কে ঢাকার সাভার থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, গেল বছরের ২১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানা হতে একটি অধিযাচনপত্রে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মো. আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল(৪৭) কে গ্রেফতারের জন্য র‌্যাবের নিকট অনুরোধ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মামলায় প্রদত্ত মোবাইল নম্বরের ভিত্তিতে বরিশালে একটি অভিযান চালানো হয়। ওই মোবাইল নম্বরটি আসামির নামেই রেজিস্ট্রেশনকৃত কিন্তু ব্যবহার করছেন অন্যজন।

ওই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে জানা যায় যে, আসামি দীর্ঘদিন বর্ণিত মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার না করায় মোবাইল কর্তৃপক্ষ সিমটি অপর ব্যক্তির নিকট রিপ্লেসমেন্ট সিম হিসেবে বিক্রি করেছে। ফলশ্রুতিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে শনাক্তপূর্বক গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। র‌্যাব সাইবার পেট্রলিং এর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত আসমির ফুটপ্রিন্ট শনাক্ত করে। অতঃপর মাঠ পর্যায়ে তথ্যের সঠিকতা যাচাই করে।

এরই ধারাবাহিকতায়, র‌্যাব-১১ এর অভিযানে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা জেলার সাভার এলাকা হতে মো. আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল (৪৭) কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং সংশ্লিষ্ট চার্জশীট পর্যালোচনা করে র‌্যাব বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ রাত পারিবারিক কলহের কারণে গ্রেফতারকৃত আশরাফ তার শিশুপুত্রের সামনে শ্বাসরোধ করে নিজ স্ত্রী সানজিদা আক্তারকে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা গোপন করার উদ্দেশ্যে মৃতের ওড়না দিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে লাশ ঝুলিয়ে দেয় এবং প্রচার করে যে, তার স্ত্রী সানজিদা আক্তার আত্মহত্যা করেছে। এ সংক্রান্তে অপমৃত্যু মামলা হয়।

লাশের সুরতহাল শেষে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে ঘটনাটি সন্দেহমূলক হওয়ায় আসামিকে ফৌজদারী কার্যবিধি এর ৫৪ ধারা মোতাবেক গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। সে ১২ দিন পর তার শশুরের সহায়তায় জামিনপ্রাপ্ত হয়। জামিন পাওয়ার পরপরই হঠাৎ করে একদিন সে আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনকালীন কখনই সে নিজ স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালী ও কর্মস্থল, নিজ সন্তান ও আত্মীয় পরিজন কারও সাথে যোগাযোগ রাখেনি।

তিনি বলেন, ময়না তদন্তের রিপোর্ট প্রাপ্তির পর, শ্বাসরোধ করে সানজিদা আক্তারকে হত্যা করা হয়েছে জানা গেলে, সোনারগাঁও থানা পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা রুজু করে। ওই মামলায় একমাত্র আসামি মো. আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল।

মামলার তদন্তে জানা যায় যে, সিলিং ফ্যানের নিচে খাট ছিল এবং ওই খাটের উপর হতে সিলিং ফ্যানের উচ্চতা খুবই কম ছিল। এমতাবস্থায়, সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়; প্রতীয়মান হয় যে, আসামি মো. আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল, তার স্ত্রী সানজিদা আক্তার কে হত্যা করেছে।

আরও জানা যায় যে, মো. আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল প্রায়ই তার স্ত্রী সানজিদা আক্তারকে মারপিট করত। সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণে আসামি মো. আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল এর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৩০২/২০১ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামির বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানার অভিযোগ পত্র আদালতে দাখিল করা হয়। জেলা ও দায়রা জজ আদালত নারায়ণগঞ্জ বিচার শেষে মামলার পলাতক আসামির বিরুদ্ধে আনীত পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০২/২০১ ধারায় অপরাধী সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ওই আইনের ওই ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত পূর্বক মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার আদেশ প্রদান করেন।

আদালত হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে ফৌজদারী কার্যবিধির ৩৬৮ ধারায় বর্ণিত বিধান মোতাবেক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই আসামিকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ প্রদান করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. আশরাফ হোসেন ওরফে কামাল ১৯৯৮ সালে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে বি.কম (পাস) করে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার একটি প্রতিষ্ঠিত সিমেন্ট কোম্পানীতে ২০০১ সাল হতে চাকরি শুরু করে। পরবর্তীতে সে ২০০৩ সালে ভিকটিমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সস্ত্রীক কোম্পানীর স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস শুরু করে।

ঘটনার পর সে ছদ্মবেশে আশুলিয়ায় বসবাস শুরু করে এবং প্রথম স্ত্রীর ঘটনা গোপন করে পুনরায় ২য় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশাকে গ্রেফতার এড়ানোর ছদ্মবেশ হিসেবে বেছে নেয়।

গ্রেফতারকৃত জানায় যে, আশুলিয়া এলাকায় সে ২০০৬ সালে সাপ্তাহিক মহানগর বার্তা এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। অতঃপর সে ২০০৯ সালে আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ লাভ করে। পরবর্তীতে সংবাদ প্রতিক্ষণ পত্রিকার সাথে সম্পৃক্ত হয়। সে ২০১৩-১৪ মেয়াদে আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। ২০১৫-১৬ মেয়াদে আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সহ-সম্পাদক পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়।

সে ওই প্রেস ক্লাবের ২০১৬-১৭ মেয়াদে নির্বাহী সদস্য পদ লাভ করে। ২০২০ সালে দৈনিক সময়ের বাংলা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করে। সে ২০২১-২২ মেয়াদে আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের পুনরায় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করে হেরে যায়। বর্তমানে সে আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সদস্য এবং স্বদেশ বিচিত্রা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছে।