ArabicBengaliEnglishHindi

যানবাহন চলাচল থেকে বিচ্ছিন্ন নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর জনপদ, অবশেষে হাওড়পাড়ে খুশির বন্যা


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৮, ২০২২, ১২:৩৩ পূর্বাহ্ন / ৭২৮
যানবাহন চলাচল থেকে বিচ্ছিন্ন নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর জনপদ, অবশেষে হাওড়পাড়ে খুশির বন্যা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি ->>
নেত্রকোনা জেলা শহর থেকে খালিয়াজুরীর দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। আর মদনের উচিতপুর থেকে খালিয়াজুরী সদরের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। দুই বছর আগে ১০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সাব-মার্জিবল (ডুবন্ত) সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

এই সড়ক ছয় মাস পানির নিচে ডুবে থাকে। বাকি ছয় মাস চলতে হয় ডুবন্ত সড়ক দিয়ে। কিন্তু ধনু নদের কারণে যানবাহন চলাচল থেকে বিচ্ছিন্ন খালিয়াজুরীর জনপদ।

নেত্রকোনার হাওড় উপজেলা খালিয়াজুরীর দীর্ঘদিনের এ সমস্যার অবসান হতে যাচ্ছে। ওই উপজেলাকে বিচ্ছিন্ন করে প্রবাহিত ধনু নদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ফেরি। ফেরি রসূলপুর ঘাটে পৌঁছলে যেকোনো যানবাহন পৌঁছবে যান বিচ্ছিন্ন খালিয়াজুরী উপজেলা শহরে।

আর এরকম খবরে খুশির বন্যা বইছে হাওড়াঞ্চলে।

গত বুধবার প্রথমে লাল ও কালো রঙের চার চাকার ২টি গাড়ি দেখে হতবাক হয় খালিয়াজুরী হাওড় উপজেলার মানুষজন। ধনু নদে কোনো সেতু না থাকায় এই শহরে চার চাকার গাড়ি এর আগে দেখেনি কেউ।

স্থানীয়রা বলছেন, ধনু নদীতে একটি সেতু হলে বদলে যেত পুরো অঞ্চলের চিত্র।

স্থানীয়রা জানান, লাল ও কালো রঙের দুটি চার চাকার গাড়ি চলার দৃশ্য দেখতে বুধবার রাস্তার দুইপাশে ভিড় জমিয়েছেন হাওড়পাড়ের শত শত মানুষ। ওই দিন বিকালে খালিয়াজুরী উপজেলা সদরে এ দৃশ্য অবলোকন করেন স্থানীয়রা। এই দুটি গাড়িই খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের মাটিতে চলা প্রথম কোনো চার চাকার যান। এর আগে কোনোদিন এ উপজেলা সদরে প্রাইভেটকার, জিপ কিংবা, বাস ও ট্রাক পৌঁছেনি।

খুব সহজে গাড়িগুলো সেখানে পৌঁছায়নি। যেতে পোহাতে হয়েছে নানা ঝক্কি-ঝামেলা। নৌকায় পার করতে হয়েছে ধনু নদ। আর সেজন্য কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থেকে আনতে হয়েছে ইঞ্জিনচালিত প্রশস্ত নৌকা। নদী পাড় হতে নির্মাণ করতে হয়েছে অ্যাপ্রোচ সড়ক। আর এসব মোকাবেলা করতে হয়েছে ফাইজারের কোভিড-১৯ টিকা পৌঁছাতে গিয়েই।

টিকা নিয়ে যাওয়া গাড়ি দুটির মধ্যে লাল রঙের গাড়িটি খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। আর কালো রংয়ের গাড়িটি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার। গাড়ি বরাদ্দ থাকলেও খালিয়াজুরী উপজেলা সদরে এর আগে কোনোদিন তাদের গাড়ি পৌঁছায়নি। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিনে ’ হাওর পাড়ের স্বপ্ন পূরণ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এরপর খালিয়াজুরীর কৃতীসন্তান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তার উপজেলাবাসীকে প্রথম সুখবরটি দেন। নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন- চেষ্টা করছিলাম ধনুতে একটি ফেরির ব্যবস্থা করতে। আজ সেই ফেরিটির অনুমোদন হলো। জয় বাংলা।

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ধনু নদটির জন্য দীর্ঘদিন এই উপজেলা শহর বিচ্ছিন্ন ছিল। জরুরি প্রয়োজনে বা কোনো প্রসূতি মাকে নিয়ে জেলা শহরে যেতে পারেনি স্থানীয়রা।

রসুলপুর ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালু হলে জেলা সদর, বিভাগ কিংবা রাজধনীর সঙ্গে খালিয়াজুরীর সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। খালিয়াজুরী থেকে জেলা সদর পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করা যাবে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার নিয়ে খুব সহজেই পৌঁছে যাবে খালিয়াজুরীতে। এছাড়া কৃষিনির্ভর এই এলাকার কৃষকদের পণ্য পরিবহণ সহজ হবে।

নেত্রকোনা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল ইসলাম বলেন, খালিয়াজুরী উপজেলার রসুলপুর ঘাটে ধনু নদে একটি ফেরি সার্ভিস চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটি বরাদ্দ হবে। খুব দ্রুত সময়ে সেখানে উঁচু একটি সেতু এবং মদনের উচিতপুর থেকে খালিয়াজুরী সদর পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণের চিন্তাভাবনা আছে।