সৈয়দ আ:হালিম রাজশাহী ->>
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় অভিনব কায়দায় প্রতারণার ফাঁদে ফেলে চাকরি দিতে গিয়ে আটক হয়েছে নওশাদ আলী। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক-এর পিয়ন পদে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে চাকরি দিতে ব্যর্থ হয় সে। টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বেসরকারি চাকরি দেয়ার প্রলোভনে আরও ২ লক্ষ ঘুষ চেয়ে বসে। দ্বিতীয় বার প্রতারিত হওয়ার আগেই র্যাবের শরণাপন্ন হন ইসমাইল হোসেন। জালিয়াতির উদ্দেশ্যে বিশ্বাস ভেঙ্গে প্রতারণা করা ও জাল দলিলকে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে অসাধুভাবে টাকা আত্মসাত করার অপরাধে আটক করা হয় নওশাদ আলীকে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, তাঁতারপুরে নওশাদ চিটার নামেই পরিচিত এক ব্যক্তিত্ব। সচিব, ডিজি (স্বাস্থ্য বিভাগ), ঠিকাদার, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পরিচয়ে চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিলো। গোপন সূত্রে জানা গেছে, তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকায় ফেন্সিডিল ও রাজশাহীতে মার্ডার মামলার আসামী ছিল নওশাদ আলী। ইসমাইলের ঘটনায় উঠে আসে নওশাদ আলীর মাধ্যমে প্রতারিত হওয়া ভুক্তভোগী পুঠিয়ার রকিবুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জাহাঙ্গীর, বানেশ্বরের হাফিজুর রহমান, মৌগাছির আব্দুল আওয়ালের নাম।
নওশাদ আলী (৫০) চারঘাটের তাঁতারপুর গ্রামের মৃত আফসার আলী মুন্সির ছেলে। ভুক্তভোগী একই গ্রামের ইব্রাহিম আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন (২৮)। চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেন প্রতারক নওশাদ আলীর গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় পূর্ব পরিচিত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ২ তারিখে চারঘাট মডেল থানায় দেয়া এজাহারের মাধ্যমে জানা গেছে, ভুক্তভোগীর বাবা ইব্রাহিম আলীকে ২০২০ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে পিয়ন পদে চাকরি দেয়ার প্রস্তাব দেয় নওশাদ আলী। ইসমাইল হোসেন এইচএসসি করার পর থেকেই বেকার ছিলেন । পরিবারের অভাব অনটনের কথা বিবেচনা করে উপায়ন্তর না পেয়ে নওশাদ আলীর ফাঁদে পা দিতে বাধ্য হন। ঐ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আগারগাঁও-এ ইসমাইল হোসেনকে ভাইভা পরীক্ষার জন্য নিয়ে যান নওশাদ আলী। মহামারী করোনায় ঐ পরীক্ষা বাতিল হয়েছে বলে অন্য একটি চাকরির প্রলোভন দেখায় নওশাদ আলী। জয়পুর হাট টিএমএফ ট্রেডার্স লিমিটেডে সুপারভাইজার পদে চাকরির জন্য ঐ বছরের মার্চ মাসের ১৫ তারিখে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নেয়। পুঠিয়া থানার বানেশ্বর বাজারের ভুক্তভোগীর বাবা ইব্রাহিম আলীর দোকান কৃষিঘর-২ এ এই ঘুষ আদান-প্রদান করা হয়। যেখানে স্বাক্ষী হিসেবে আব্দুল হালিমের ছেলে মিন্টু নামের এক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এই অর্থ আইএফআইসি ব্যাংক এর হিসাব নং-০১৭০২৬২৬০৫০৩১, চেক নং-ঝঅঐ ১০১৪৪৩৪ এ উল্লেখিত ৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ বাবদ একটি চেক নওশাদ আলী গ্রহণ করেন। ঐ বছরের পহেলা সেপ্টেম্বর বিকেল ৩ টায় ভুক্তভোগীর বাবার দোকানে সুপারভাইজার পদের একটি নিয়োগ পত্র দিয়ে যায় নওশাদ আলী। ইসমাইল হোসেন ঐ চাকরিতে সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখ যোগদানের জন্য গেলে অফিস খুঁজে পাননি। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁতারপুর স্কুলপাড়া গ্রামের নওশাদ আলীর বাড়ির সামনে ইসমাইলকে ডেকে নিয়ে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনে ম্যানেজার পদে চাকরির কথা বলে ২ লক্ষ টাকবার প্রলোভন দেখায়। ইসমাইল হোসেন বুঝতে পেরে আসছি বলেই বানেশ্বর বাজারে এসে ডিউটিতে থাকা ইনচার্জ ডিএডি ফরিদ উদ্দিন ও এসআই নিবাস মিস্ত্রীকে বিস্তারিত জানান। ঐ দিন বিকেল ৪ টায় নওশাদ আলীকে আটক করেন র্যাব।
চারঘাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এজাহারে ৬ ফেব্রুয়ারি মামলা নং ০৯ ধারার ৪০৬/৪২০/৪৭১/৪৬৮ পেনাল কোডে রুজ্জু করা হয়। ঐ থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মোজাহারুল ইসলাম জানান, নওশাদ আলীকে আটক করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :