জবি প্রতিনিধি ->>
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধান ফটকের পাশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসির) ড্রেনের কাজের নেই কোনো অগ্রগতি। ড্রেনের কাজ শেষ না করে চলে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থী এবং সাধারণ পথচারীরা।
আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের পাশে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পয়নিষ্কাসন ড্রেনের কাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় রেখে চলে যায়।
সেই সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পয়নিষ্কাসন ড্রেনের নিজ দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে পানি এবং সুচালো রডগুলো। যা স্পষ্ট ভেসে আছে ড্রেনের উপরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটক থেকে শুরু করে শাঁখারী বাজারের মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০০০ মিটারের বেশি অংশ জুড়ে একই রকম চিত্র। এরফলে ডিএসসিসির উন্নয়ন মূলক কাজ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সহ সাধারণ পথচারীদের মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৬ জুন ফুটপাতের পুরাতন ড্রেন খুঁড়া শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু গত ৮ জুন ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ ড্রেনের পুরো কাজ শেষ না করে চলে যায় হরহামেশে। পয়নিষ্কাসন ড্রেনের উপরের ঢাকনা অথবা কোনো ধরনের সাবধানতা অবলম্বন না করে ড্রেনের ঢাকনা উন্মুক্ত রেখে চলে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০ দিন হতে চলছে সিটি কর্পোরেশনের কাজের। একটা উন্নয়ন সংস্থা কিভাবে পারে এমন অব্যবস্থাপনা মূলক কাজ করতে। আমাদের ক্যাম্পাসের সামনে এমনভাবে ড্রেন খুঁড়ে রেখেছে অথচ কারো কোনো খবর নেই। একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকে এমন অব্যবস্থাপনা মূলক উন্নয়ন কাজের কি দরকার ছিল তাদের।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, এ অসম্পন্ন কাজ সৌন্দর্য নষ্ট করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের পরিবেশের। এছাড়াও আমাদের প্রধান ফটক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো নিয়মিত আসা-যাওয়া করে এমন অব্যবস্থাপনার জন্য যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। যেকোন সময় অবচেতন মনে কেউ ফুটপাত ব্যবহার করতে গেলেই পড়বে ড্রেনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ পথযাত্রীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে এসব উন্নয়ন কাজের অব্যবস্থাপনায়।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন,বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি করু বসে বসে বুঝতে পারছি না। সিটি কর্পোরেশন একবার আমাদের মাঠ দক্ষল করেছে এখন কি ক্যাম্পসের সীমানায়ও হস্তক্ষেপ করবে এভাবে। এতোদিন হয়েছে অথচ এখনো আমাদের গেটের পাশের এমন বেহাল দশা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশানের উচিত দিনে দিনে এসব কাজ সম্পন্ন করা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন আমাদের প্রধান ফটক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। ফুটপাতের ড্রেনের অসম্পূর্ণ কাজের জন্য আমাদের রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে তৈরি হচ্ছে ক্যাম্পাসের সামনে বিশাল আকারের যানযট এবং পাশাপাশি রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
জাহিদুল আরও বলেন, অসম্পূর্ণ ড্রেনের কাজ আমাদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তির মধ্যে ফেলছে। আমরা ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছি না। রাস্তা ব্যবহার করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া এটি প্রধান ফটকের সামনে হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশনের উপরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনার বিভাগের শিক্ষার্থী আলি হায়দার আকাশ বলেন, আমরা প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা – যাওয়া করতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ড্রেনের কাজ না হওয়ায় ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছি না। এতে করে আমাদের রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। রাস্তায় চলন্ত গাড়ির মধ্যে দিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হয়।
আকাশ আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা যেমন এই পথ দিয়ে চলাচল করে নিয়মিত তেমনি শিক্ষকদের গাড়িসহ সদরঘাট অভিমুখী মানুষের ঢল নামে এ পথে। তাই কোন ধরণের দূর্ঘটনা ঘটার আগেই আমরা অচিরেই সমাধান চাই ড্রেনের অসম্পূর্ণ কাজের।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে এবং মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায় নি।
সিটি করপোরেশনের উপ-সহকারী মোহাম্মদ প্যারিসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো সংযোগ স্থাপ করা যায় নি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ক্যাম্পাসের আশেপাশের বিষয়ে আমরা জানি না। আমাদের যেখান থেকে বলা হয়েছে কাজ করতে আমরা সেটা করেছি। আমি গতকাল গিয়ে দেখি এসেছি বাকি কাজটা এখনো করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আগামীকালই আমি কন্টাকটার কে বলেছি করে দিয়ে আসতে। কিন্তু ক্যাম্পাসের সামনের ভাঙা অংশে আমাদের কিছু করার নেই সেটা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা জানেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ই জুন ড্রেন খুঁড়ার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আবাসিক ঘরগুলো ভেঙে পড়ে যায়। কর্মচারী ডরমিটরি সংশ্লিষ্ট রুমগুলো কোনোভাবে তাড়াহুড়ো করে বাঁশ দিয়ে হেলান দিয়ে রেখে চলে যায় সিটি কর্পোরেশনের লোকেরা।।
আপনার মতামত লিখুন :