সিলেট প্রতিনিধি ->>
সিলেটে জুড়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অস্বাভাবিক মৃত্যু। সচেতন মহল ও প্রশাসনকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে মৃত্যর হার নিয়ে। গত ১ সপ্তাহে সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করা লোকজন হত্যাকান্ড সহ নানান ঘটনায় শিকার হয়েছে। হুট করে এসব হত্যাকান্ড। পুলিশ বলছে- এসব ঘটনায় তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও ঘটনায় জড়িত অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানা যায়- গত ২৪ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিলেট মহানগরীর উত্তর বালুচরের সোনার বাংলা আবাসিক এলাকার সেকান্দর মহল নামক (৩৬৪ নং) পাঁচতলা বাসা থেকে আফিয়া বেগম সামিহা নামের এক মহিলার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার জাঙ্গাইল তুয়াকুল গ্রামের আজির উদ্দিনের মেয়ে। এ ঘটনায় তার কথিত স্বামী ইসমাইল নিয়াজ খান ও রুমমেট মোছা. মাজেদা খাতুন মুন্নি (২৯) কে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মূলত অসামাজিক কার্যকলাপের টাকার দ্বন্দে তাকে খুন করা হয় বলে র্যাব জানিয়েছে।
গত ২৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আনোয়ার হোসেন (৪০) নামের এক এনজিও কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ। ক্লুলেস এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃতরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
হবিগঞ্জ: গত ২৪ আগস্ট (বুধবার) সকালে নিখোঁজ হওয়া হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ৭নং ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ফয়জাবাদ এলাকার মো. আব্দুল মতিন মিয়ার দেড় বছর বয়সী শিশু কন্যা তোহা আক্তারের মরদেহ পরদিন ২৫ আগস্ট বিকেলে একটি লেবু বাগান থেকে উদ্ধার করা হয়। মামলা মোকদ্দমার বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ একই গ্রামের ফুল মিয়া পুত্র জুবায়েল আহমেদ ও আবুল হোসেনের পুত্র তারেক মিয়াকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ: গত ২৫ আগস্ট বুধবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বড়গোফ টিলার পশ্চিম অংশের নীচে কড়ুইগড়া রাস্তায় আব্দুল হাসিম (৬৫) নামের এক মুয়াজ্জিনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বড়গোফ টিলার মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে এবং বড়গোফ টিলার মসজিদের মুয়াজ্জিন। এ ঘটনায় নিহতর পুত্রবধূ জুবাইদা ও সাত বছরের নাতি শাকিব নামে আরও দুইজনকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছে। তাদেরকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
গত ২৮ আগস্ট রোববার সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে খাদিজা আক্তার (২৪) নামের ৯ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বারহাল গ্রামের শামিম আহমেদর স্ত্রী এবং পার্শ্ববর্তী বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্ধ গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ে। স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্যর জেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে মারা যাওয়া খাদিজার পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছেন।
একই দিন সিলেট মহানগরীর শাহপরান থানাধীন টুলটিকর এলাকার মিয়াবাগের বন্ধন হাউস থেকে রাজমিন বেগম (৪০) নামের তিন সন্তানের জননীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্বামীর নির্যাতনে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে নিহত রাজমিনের বাবার বাড়ির লোকজনের দাবি করেছেন। তিনি ওই এলাকার নাছির উদ্দিনের স্ত্রী ও মিরাপাড়ার মৃত ইছন মিয়ার মেয়ে।
২৮ আগস্ট রোববার বিকেলে স্বামীর নির্যাতনে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সাজনা বেগম (৪২) নামের তিন সন্তানের জননীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল থেকে পালানোর সময় তার স্বামী সুলতান মিয়াকে আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশে সোপর্দ করেন সাজনার স্বজনরা। সাজনা ছাতক উপজেলার সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের বাউভোগলী গ্রামের মৃত আছদ্দর আলীর মেয়ে। আর দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের ফুলকারগাঁও গ্রামের মৃত আবদুল গফুরের পুত্র।
বুধবার (৩১ আগস্ট) মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের মৌলভীচক গ্রাম থেকে এক পা কলসিতে ঢুকানো, গলা এবং কোমরে রশি বাঁধা অবস্থায় মিনা বেগম নামের এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের মৌলভীচক গ্রামের কলিমুল্লাহর ছেলে লেচু মিয়া ওরফে লেইছ মিয়ার স্ত্রী। এ ঘটনায় তার স্বামী লেইছ মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। এটাকে হত্যাকান্ড বলে দাবি করেছেন মিনা বেগমের বাবার বাড়ির লোকজন।
বুধবার (৩১ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বস্তা বন্দি অবস্থায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও এলাকায় সুনামগঞ্জ বাইপাস সড়কের পাশ থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারনা ৩ দিন আগে কেউ তাকে খুন করে লাশ ঘুম করতে বস্তাবন্দী করে এখানে রেখে গেছে। লাশটি পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিলো বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে সুজন সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন- ‘সামাজিক অবক্ষয়তা, বিচারহীনতার কারণে এসব হত্যাকান্ড ও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এ থেকে আমাদের উত্তরণে দ্রুত বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। সামাজিক ভাবে অবক্ষয়তা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।
এ ব্যাপারে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের পুলিশ সুপার (এডমিন ও ফিন্যান্স) জেদান আল মুসা বলেন- ‘আমরা প্রত্যেকটি ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এসব ঘটনার পর থেকে হত্যাকান্ডের কারণ বের করেছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন- ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের ডিআইজি স্যার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম’র দিকনির্দেশনায় কাজ করছি।
আপনার মতামত লিখুন :