ArabicBengaliEnglishHindi

হবিগঞ্জের মাধবপুরে ‘জাল নিবন্ধন’ সনদে চাকরি করছেন এক শিক্ষিকা


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০২২, ১০:৪৩ অপরাহ্ন / ২০৩
হবিগঞ্জের মাধবপুরে ‘জাল নিবন্ধন’ সনদে চাকরি করছেন এক শিক্ষিকা

শেখ শাহাউর রহমান বেলাল ->>
শিক্ষা বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে এক শিক্ষিকা জাল সনদ ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করার পাশাপাশি বেতনভাতা উত্তোলন করে আসছেন। বিষয়টি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি জানলেও মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে আসার অভিযোগও রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) তদন্তে ওই শিক্ষকদের সনদ জাল বলে প্রমানিত হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ বরং অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকার সরকারি বেতন-ভাতা উত্তলনে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

জানাযায়, মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন বিশ্বনাথ হাইস্কুল এন্ড কলেজ এ ২০১৩ সালে হিন্দু ধর্ম শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন ¯িœগ্ধা রানী দাস। যোগদানের সময় ২০১০ সালের ৬ষ্ট শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সনদ জমা দেন তিনি। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির সনদও জমা দেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বোর্ড কমিটিকে ম্যানেজ করে চাকুরির নেন তিনি। চাকরি নেয়ার সময় এনটিআরসিএ’র জাল সনদে সত্বায়িত করেন তৎকালীন মাধবপুর কৃষি কর্মকর্তা আতিকুল হক এবং প্রতি স্বাক্ষর করেন তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। এর আগে উপজেলার নোয়াপাড়ায় অবস্থিত সৈয়দ সঈদ উদ্দিন হাইস্কুল এন্ড কলেজে ২০১১ সালে একই সনদ দিয়ে ২বছর চাকুরি করেন ওই শিক্ষিকা।

এদিকে বেশ কয়েক বছর ধরে ¯িœগ্ধা রানী দাসের সনদ জাল বলে গুঞ্জন উঠলে ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারী শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রফেসর এ. এইচ. এম. জাহাঙ্গীর আলম প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন ও নিরক্ষিা করার জন্য আসলে মৌখিক অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ। পরবির্তীতে সনদ যাচাই-বাছাই করে অবশেষে ওই শিক্ষিকার নিবন্ধন সনদটি জাল বলে প্রত্যয়ন দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটি ¯িœগ্ধা রানী দাসের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং এনটিআরসিএ-র প্রত্যয়ন আড়াল করে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে শিক্ষিকাকে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলনে সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ উঠে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এনটিআরসিএ-র সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম এর স্বাক্ষরিত ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি পত্রে হিন্দু ধর্মের শিক্ষিকা ¯িœগ্ধা রানী দাস, পিতা-সুবল চন্দ্র দাস, মাতা-মালতী রানী দাস, রোল-৩১১০৬৯৯৪, রেজিস্ট্রেশন ও সন ১০০০০৩৫১৩২/২০১০, পরীক্ষা নং-৬ষ্ট, রেজিঃ পরীক্ষা-২০১০ হিন্দু ধর্ম নিবন্ধন সনদটি সঠিক নয়। উক্ত সনদটি জাল ও ভূয়া। উত্তীর্ণ রোল নম্বরটি অন্য ব্যক্তির (দেলোয়ার হোসাইন চৌধুরী, পিতা- আব্দুল করিম চৌধুরী এর)। পত্রে এনটিআরসিএ ভুয়া ও জাল সনদধারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে তা কর্তৃপক্ষকে অবগতি করার জন্য নির্দেশ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এক বছর অতিবাহীত হলেও ব্যবস্থা না নিয়ে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মামলা করতে গড়িমসি করছেন প্রতিষ্ঠান কতৃপক্ষ।

অভিযুক্ত শিক্ষিকা ¯িœগ্ধা রানী দাস বলেন, ‘আমার সনদটি জাল নয়, জাল হলে এমপিওভুক্তি হয় কিভাবে? তবে কোন প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছেন এমন প্রশ্নে সঠিক উত্তর দিতে পারেনি ওই শিক্ষিকা।

প্রধান শিক্ষক, হারুন অর রশিদ এ বিষয়ে বলেন, মন্ত্রনালয়কে আমি মৌখিক জানিয়েছি, সেখান থেকে নির্দেশনা আসলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এনটিআরসিএ’র নির্দেশনা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।

ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার মো: রুহুল্লাহ জানান, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। কেননা আমার যোগদানের পূর্বে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। আমার কাছে কেউ লিখিত কোন অভিযোগ করেননি।’ অভিযোগ করলে তার সনদটি যাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।