ArabicBengaliEnglishHindi

হোটেল কর্মচারী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক ভুমিদস্যু মুজিবুল


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২৬, ২০২২, ১:৫০ অপরাহ্ন / ৪৩২
হোটেল কর্মচারী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক ভুমিদস্যু মুজিবুল

নিজস্ব প্রতিবেদক ->>
শাহ আলম মিয়া,পালিত সন্তান হিসেবে বেড়ে ওঠেন রাজধানী ঢাকার কল্যানপুর এলাকায় কাশেম মাতবরের পরিবারে, এলাকায় এখনো গুঞ্জন আছে শাহ আলম মিয়াকে দত্তক নেয়ার পূর্বে কাশেম মাতবরের সংসারে পরপর দুটি সন্তানের মৃত্যু হয়,এরপরে শাহ আলম মিয়াকে দত্তক নিলে তার পরিবারে পরবর্তীতে আরও একটি ছেলে সন্তান ও তিনটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তারা হল- মোঃ আলী আমজাদ খোকন (৪৫) মোসাঃ রেহেনা বেগম (৪৭) মোসাঃ শাহানা বেগম (৪২) এবং মোসাঃ জোছনা বেগম (৪০) বড় সন্তান হিসেবে শাহ আলম মিয়া এক সময়ে হাল ধরেন সংসারের শুরু করেন প্রবাস জীবন ততকালীন সময়ে ইরাকে প্রবাস জীবন কাটান প্রায় পাঁচ বছর।

প্রবাসে চাকরি শেষে দেশে ফিরে নিজ নামে ২৪/৩ শহীদ মিনার রোড কল্যাণপুর এই হোল্ডিং নাম্বারের ৯ ( নয়) শতাংশের একটি প্লট ক্রয় করেন,যেখানে ১১ টি রুমসহ একটি টিনসেট বাড়ি , এরপরে পরিবারের সম্মতিক্রমেই বিয়ে করেন মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী দেওয়ান পরিবারে। মোসাঃ হাজেরা বেগম শিল্পী নামের এক মেয়েকে বিয়ে করে শুরু করেন সংসার জীবন, বিয়ের ২ (দুই) বছর পরেই তার ঘর আলোকিত করে তার পরিবারে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়, কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুরতায় মাত্র ৩৫ (পয়ত্রিশ) বছর বয়সে হঠাৎ হার্ড এ্যাটাকে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরকাল গমন করেন।

মৃত্যুর সময়ে তার পুত্র মোঃ স্বজলের বয়স ছিলো মাত্র (চার) বছর , শাহ আলম মিয়ার মৃত্যুর এক বছর অতিক্রম হতে না হতেই তার রেখে যাওয়া বাড়িটার উপরে শকুনের চোখ পরে,প্রতিবেশী খাজা মুজিবুল হক,বিভিন্ন সময়ে নানা কৌশলে শাহ আলম মিয়ার স্ত্রীর নিকট বাড়িটা বিক্রির প্রস্তাব পাঠানো শুরু করে।

তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন মাধ্যম অবলম্বন করে শুরু করে ভয়ংকর পরিকল্পনা, কখোনো ভয়ভীতি প্রদর্শন কখোনো টাকার প্রলোভন কখোনো বা হুমকি। এমনকি সাবেক কমিশনার দেলোয়ারের মাধ্যমেও বাড়িটি ক্রয় করার প্রস্তাব পাঠায় হাজেরা বেগম শিল্পীর কাছে। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন মৃত শাহ আলম মিয়ার স্ত্রী হাজরা বেগম শিল্পী।

সকল প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শুরু করে কুটনীতি, একই এলাকার আর এক ভূমিদস্যু ইনসান চৌধুরীর সাথে সলাপরামর্শ করে মৃত শাহ আলম মিয়ার পিতা, হাজেরা বেগম শিল্পীর শশুর কাশেম মাতবরকে বুদ্ধি দেয় কোর্টে মামলা করার,আর মামলার মূল বিষয় থাকবে তার দত্তক নেয়া মৃত শাহ আলম মিয়ার রেখে যাওয়া একমাত্র পুত্র মোঃ স্বজলের লিগ্যাল গার্ডিয়ান হওয়া,আর যদি সে লিগ্যাল গার্ডিয়ানের রায় পায় তাহলে শাহ আলম মিয়ার রেখে যাওয়া একমাত্র বাড়িটি থাকবে তার দায়িত্বে যেহেতু একমাত্র নাতি মোঃ স্বজল নাবালক ছিলো।

এমন কু-পরামর্শ দিয়ে কাশেম মাতবরকে দিয়ে কোর্টে মামলা করায় এবং মামলা চলাকালীন সময়ে কাশেম মাতবরকে টাকার প্রলোভোন দেখিয়ে শেয়ালের চেয়েও অধিক চতুর ভূমিদস্যু খাজা মুজিবুল হক সবার অগোচরে তার বোন নাহার বেগমের নামে বাড়িটা ক্রয় করার প্রস্তাব দেয় কাশেম মাতবরকে।

এই প্রস্তাব পেয়ে কাশেম মাতবরের কুবুদ্ধির উদয় হয় তিনি চিন্তা করেন শাহ আলম ছিলো তার পালিত সন্তান, আর সে বেচে নেই তার অবর্তমানে তার রেখে যাওয়া সমস্ত সম্পদের মালিক হবে তার ছেলে মোঃ স্বজল এবং শাহ আলম মিয়ার স্ত্রী – হাজেরা বেগম শিল্পী । অর্থাৎ যে সম্পদের মালিক তিনি না আর মামলায় সে গার্ডিয়ানের দায়িত্ব পাবে কি পাবো না তারও কোন অস্তিত্ব নেই। তাহলে সেই সম্পদের বিনিময়ে যদি টাকা পাওয়া যায় তাহলে দোষ কি।

এমন পরিকল্পনা করেই কাশেম মাতবর, তার পালিত সন্তান শাহ আলম মিয়ার বাড়িটি মাত্র ১২,০০০০/-
(বার লক্ষ) টাকা দাম নির্ধারন করে খাজা মুজিবুলের কাছ থেকে মাত্র ২০০০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা নিয়ে বায়না দলিল করেন, যেখানে দেখা যায় খাজা মুজিবুল হকের বোন মোসাঃ নাহার বেগমের নামে এই বায়না দলিল। কিন্তু কোর্টে যখন এই মামলার রায় ঘোষণা হয় তখন মোঃ স্বজলের লিগ্যাল গার্ডিয়ানের রায় পায় তার একমাত্র গর্ভধারীনি মা হাজেরা বেগম শিল্পী। অর্থাৎ মৃত শাহ আলম মিয়ার স্থাবর- অস্থাবর সকল সম্পত্তির মালিক হয় তার স্ত্রী হাজেরা বেগম শিল্পী ও তার পুত্র মোঃ সজ্বল। তাহলে এবার কি হবে তাৎক্ষনিক খাজা মুজিবুল হক তৈরী করে অন্য একটি জ্বাল দলিল,আর সেই জ্বাল দলিলের মাধ্যমে মামলা করেন কোর্টে, আর সেই মামলা চলাকালীন সময়ে পেশিশক্তির বলে বাড়িটি দখল করে,এখোনো বহলতবিয়্যতে রয়েছেন। আরও খোজ নিয়ে জানা যায় এরকম আরও কয়েকটি বাড়ি একই এলাকায় দখল করে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন ভূমিদস্যু খাজা মুজিবুল হক ও ইনসান চৌধুরী।

এ বিষয়ে হাজেরা বেগম শিল্পী বিভিন্ন দফতরে দরখাস্ত দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি,শুধু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দফতর থেকে ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেয়া হয়েছিল স্থানীয় প্রশাশনকে আর সেই আদেশ বলেই মৃত শাহ আলম মিয়ার স্ত্রী হাজেরা বেগম শিল্পীকে বাড়িটি বুঝিয়েও দিয়েছিলো প্রশাশন।

কিন্তু অবৈধ কালো টাকার কাছে তাও হার মেনে গেলো। ততকালীন কমিশনার দেলোয়ার ও প্রশাশনকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে রাতারাতি পূনরায় বাড়িটি জবরদখল করে নেয় খাজা মুজিবুল হক ও পেছনে মদদ দিয়েছেন ইনসান চৌধুরী এবং খোজ নিয়ে আরও জানা যায় কোন এক অদৃশ্য সরকার দলীয় বড় মাপের নেতার ছত্রছায়ায় খাজা মুজিবুল হক এসব জঘন্য কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয় কালো টাকা ব্যবহার করে কোর্ট থেকে একটি এক তরফা রায় নিয়ে এসেছেন খাজা মুজিবুল হক যেখানে উল্লেখ করা হয় মৃত শাহ আলমের দলিল ভূয়া এবং বিবাদী হাজেরা বেগম শিল্পী অনুপস্থিত থাকার কারনে এই এক তরফা রায় প্রদান করা হয়। এবিষয়ে পারিবারিক জজ আদালতে আপিল করেছেন মৃত শাহ আলম মিয়ার স্ত্রী হাজেরা বেগম শিল্পী যা এখনো চলমান। অপরদিকে মিরপুর ভুমি অফিসে খোজ নিয়ে দেখা যায় ২৪/৩ শহীদমিনার রোড কল্যানপুর এই হোল্ডিং নাম্বারের খাজনা পরিশোধ করেছেন হাজেরা বেগম শিল্পী তাও ২০১১ ইং সাল পর্যন্ত, হঠাৎ করেই ২০১২ ইং সালে খাজনা পরিশোধ করতে গেলে দেখা যায় হাজেরা বেগম শিল্পীর নামে আর খাজনা নেয়া হবে না।

নাম পরিবর্তন হয়ে গেছে খাজা মুজিবুল হকের বোন নাহার বেগমের নামে। এবং গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল,পানির বিল সবই রাতারাতি পরিবর্তন হয়েছে শাহ আলম থেকে নাহার বেগমের নামে। তিতাস গ্যাস,ডেসকো এবং ওয়াসার অফিসে খোজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। অপরদিকে খাজা মুজিবুল হককে মদদ দিয়ে ইনসান চৌধুরীর কি লাভ হলো এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় ২৪/৩ নাম্বার হোল্ডিং এর পাশের প্লটটি ইনসান চৌধুরীর এবং খাজা মুজিবুল হককে জবর দেখলে সহোযোগিতা করার বিনিময়ে ইনসান চৌধুরী প্রায় ২ কাঠা জমি নিয়ে নিয়েছেন খাজা মুজিবুল হকের কাছ থেকে, সেখানে চলছে ভবন নির্মানের কাজ অলরেডি ৬ষ্ঠ তালার ছাদ ঢালাই-করা হয়ে গেছে। কার যায়গায় কে বাড়ি নির্মান করছে এটা বোঝা বড় দায়। এমনই একটি উক্তি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ একই এলাকার এক ব্যক্তি।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায় ইনসান চৌধুরী কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন অনেক আগেই তবে এই সকল বিষয়ে তার পুত্র ইয়েনহুয়া চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি স্বীকার করেন যে ২৪/৩ হোল্ডিং নাম্বারের বাড়িটি প্রকৃত শাহ আলম মিয়ারই ছিলো,তবে তাদের প্লটটিতে যে প্রায় ২ কাঠা জমি যোগ করা হয়েছে সেই বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

প্রশ্ন –
১/ কোন কাগজের বলে তিতাস,ডেসকো এবং ওয়াসা বাড়িটির বিল মালিকানা পরিবর্তন করলেন?
২/ এক তরফা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল চলাকালীন মিরপুর ভুমি অফিসের সাবরেজিস্টার জমির খাজনা খারিজ নাম পরিবর্তন করলেন কিভাবে?
৩/ সামান্য হোটেলে চাকরি করা মুজিবুল হক কিভাবে বনে গেছেন হাজার কোটি টাকার মালিক খাজা মুজিবুল হক?
৪/ প্রধানমন্ত্রীর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্থানীয় প্রশাশনকে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হলে বাড়িটি হাজেরা বেগম শিল্পী ও তার পুত্র মোঃ স্বজকে বুঝিয়ে দেয়ার পরেও আবার কোন অদৃশ্য ক্ষমতা বলে কার ছত্রছায়ায় আবার রাতারাতি বাড়িটি খাজা মুজিবুল হকের দখলে চলে গেল?
৫/ নাহার বেগমের নামে সকল প্রকার বিল এবং জমির খাজনা খারিজ থাকা সত্তেও কেনো বাড়ির সামনে সাইনবোর্ড লাগানো এই জমির মালিক খাজা মুজিবুল হক?
৬/ যেহেতু বাড়িটির সামনে সাইনবোর্ড দেয়া খাজা মুজিবুল হকের নামে তাহলে আবার কেন কি কারনে ২ ( দুই লক্ষ) টাকা দিয়ে বায়না দলিল করা হল নাহার বেগমের নামে? তাহলে বাড়িটির প্রকৃত মালিক কে?

সকল প্রশ্নের উত্তর পেতে এবং ভূমিদস্যু খাজা মুজিবুল হকের মুখোশ উন্মোচন দেখতে চোখ রাখুন আগামীর সংখ্যায়।