নিজস্ব প্রতিবেদক ->>
দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন ও অ্যাসেম্বলিং কারখানা রয়েছে ১৫টি কোম্পানির। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও পাঁচ-ছয়টি প্রতিষ্ঠান। গত অর্থবছর প্রায় ৪ কোটি ১২ লাখ হ্যান্ডসেট উৎপাদন ও আমদানি হয়েছে। উৎপাদন হওয়া সেটের প্রায় ৬০ শতাংশই হয়েছে দেশে। এ ছাড়া অবৈধপথে হ্যান্ডসেট আমদানির সংখ্যাও কম নয়। এর পরিমাণও প্রায় ২০ শতাংশ। কিন্তু দেশে উৎপাদন হলেও দাম কমছে না মোবাইল ফোনের।
সরকারের বিভিন্ন ধরনের শুল্ক সুবিধা নিলেও বিদেশ থেকে আমদানি করা মোবাইলের মতোই দাম রাখছে কোম্পানিগুলো। সম্প্রতি ডলারের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের উৎপাদিত মোবাইল ফোনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক কোম্পানি। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন মডেলের ফোনে আগের তুলনায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়েছে তারা। এরমধ্যে গত নভেম্বর থেকে অপো, ভিভোসহ আরও কয়েকটি ব্র্যান্ড দাম বাড়িয়েছে।
গত মাসে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শাওমি ও রিয়েলমি। দেশে উৎপাদিত হয়েও গ্রাহকদের কাক্সিক্ষত প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না দাবি করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন উৎসাহিত করে রপ্তানি করা ও দেশে সস্তায় হ্যান্ডসেট দিতে আমদানি করা হ্যান্ডসেটের ওপর কর বাড়ায়। অন্যদিকে দেশি উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ কর ছাড় দেয়। যেখানে বিদেশ থেকে আমদানি করা হ্যান্ডসেটের ওপর ৭৫ দশমিক ৩১ শতাংশ কর সেখানে উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে করহার ধার্য করা হয় মাত্র ১৫ শতাংশ। এ বিষয়ে মোবাইলের ম্যানেজার (পাবলিক রিলেশন্স) মো. রুপক বলেন, মাঝখানে সব ফোনেরই দাম কমেছিল। এখন ব্যাপারটা হচ্ছে বাংলাদেশে আমাদের ৬০ বা ৭০ শতাংশ রেডি করতে হয়। কিছু জিনিসের জন্য তো আমাদের চায়নার উপর নির্ভর করতেই হচ্ছে। চায়নাতে এসব জিনিসের দাম বেশি। এটা আসলে আমাদের করার কিছু নেই। কারণ এখন ডলারের দামও বাড়ছে।
এদিকে মোবাইল ফোন উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরে মোবাইলের চিপ সংকট রয়েছে যা দিন দিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এছাড়া মোবাইলের প্যানেলেও সংকট দেখা দিয়েছে। এসব কারণে মোবাইলের দাম বাড়ছে বিশ্বে। সেই প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশর মোবাইল ফোনের বাজারেও। এছাড়া নতুন যুক্ত হয়েছে ডলারের দাম ও জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধির চাপ। ফলে এরইমধ্যে দেশে মোবাইলের দাম আগের চেয়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। কয়েকটি ব্র্যান্ড এরইমধ্যে দাম বাড়িয়েছে, কেউ কেউ বাজার পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রতি মাসে ১০ লাখের মতো স্মার্টফোন বিক্রি হয়। বাজার চাহিদা এটাই। তবে বাজারে বর্তমানে সরবরাহ রয়েছে সাড়ে সাত থেকে ৮ লাখের মতো স্মার্টফোন। আরও জানা গেলো, বছরে এখন ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ স্মার্ট ফোন বিক্রি হয়। যার মার্কেট শেয়ার মোট বিক্রি হওয়া মোবাইলের ৪০ শতাংশের মতো।
দেশে মটোরোলা মোবাইল ফোনের ন্যাশনাল পার্টনার সেলেক্সট্রা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিব আরাফাত বলেন, ডলারের দাম বেড়েছে, চিপসেটের দাম তো আগেই বেড়েছে। জাহাজ ভাড়াও বেড়েছে।
ফলে তার প্রভাব পড়েছে মোবাইল মার্কেটে। এরইমধ্যে মোবাইলের দাম ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। এদিকে দেশের বাজারে ফিচার ও স্মার্টফোনের দাম ৮ থেকে ৯ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়ে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মেসবাহউদ্দিন বলেন, মোবাইলের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ। কোথাও কোথাও তা ১০ শতাংশ ছুঁয়ে ফেলেছে। ডলারে নূন্যতম ১২ শতাংশ ডিভ্যালু হওয়ায় তা ১০ শতাংশে পৌঁছেছে। পাশাপাশি জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি এবং চিপ সংকটও একটা বড় কারণ বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, দাম না বাড়িয়ে কোনও উপায় নেই। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ তো আমদানি করতে হয়।
তিনি জানান, কিছুকিছু ব্যবসায়ী এখনও কমদামে (১০ শতাংশ দাম না বাড়িয়ে) মোবাইল বিক্রি করে সেল ভলিউম ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। ফলে এখনও বাজারে কোনো কোনো মোবাইল কিছুটা কম দামে পাওয়া গেলেও বেশিদিন এভাবে চলবে না।
এদিকে দেশে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় শুধু মোবাইল ফেন নয় বরং সব ধরনের প্রযুক্তিপণ্যের দাম অন্তত ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে। কিছুদিন আগে ৬৮ হাজার টাকা দামের কোর-আই ফাইভ মানের ল্যাপটপ এখন বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৭৫ হাজার টাকায়।
কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রযুক্তিপণ্যের সরবরাহে কোনও সংকট নেই। এ বিষয়ে কম্পিউটার ও সলিউশন পণ্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি সুব্রত বলেন, আলাদা আলাদা করে বলা যাবে না। কারণ, সব হার্ডওয়্যার পণ্যের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে। বাজেটে নতুন ট্যাক্স আরোপ করা না হলে দাম বাজেটের আগ পর্যন্ত এমনই থাকবে।
পণ্যের সাপ্লাই চেইনে কোনও সংকট নেই। বাজারে প্রচুর পণ্য রয়েছে। তিনি জানান, বাজার কিছুদিন ধরেই ধীরগতির। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :