স্টাফ রিপোর্টার ->>
নওগাঁয় শহরের প্রাণকেন্দ্র গোস্তহাটির মোড়ে পৌরসভার নামে থাকা প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে লিটন ঘোষ নামে প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে।
গত ১ মাস যাবত দিনে দুপুরে প্রকাশ্য এই দখলদারী চললেও বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে চলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। মোটা অংকের টাকায় মেয়র ও কাউন্সিলরকে ম্যানেজ করেই এই সরকারী সম্পদ দখলের মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্পত্তিটি উদ্ধারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের গোস্তহাটির মোড়ের বর্তমান শৈলগাছী ইজিবাইক স্টান্ডে নব্বই এর দশকে পৌরসভার ডিমের বাজার ও তরকারী বাজার ছিলো। ২০০২ সালের দিকে বাজারটি স্থানান্তর হলে সেখানে টিনের তৈরী দোকানপাট তৈরী করে দখলে নেয় প্রভাবশালী লিটন ঘোষ। দোকানগুলো থেকে নিয়মিত ভাড়া আদায় করে আসছেন লিটন। বর্তমানে টিনের দোকানগুলো ভেঙ্গে জমিটি স্থায়ীভাবে দখলে নিতে ইটের গাঁথুনি দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। শহরের ভেতরে প্রকাশ্য অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও বিষয়টি জেনেও নীরব ভূমিকায় রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। নির্মাণ কাজ বন্ধে সম্প্রতি সচেতন এলকাবাসী গণজমায়েত হয়ে মানববন্ধন করলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। মোটা অংকের টাকায় রফাদফার মাধ্যমে সরকারের কোটি টাকা মূল্যের এই খাস সম্পত্তি লিটনকে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে পৌর মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।
ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা জুয়েল দাস, কাওসার হোসেন, তুহিন আহম্মেদসহ অনেকেই বলেন, এই জমিতে এক সময় পৌরসভার হাট বাজার ছিলো। সকলেই জানেন এটা খাস সম্পত্তি। অথচ ২০ বছর যাবত এখানে বিভিন্ন টিনের দোকান দিয়ে ২০০-৫০০ টাকা ভাড়া আদায় করেন লিটন। প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। এখন দেখছি স্থায়ীভাবে দখলের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করছে। মানববন্ধন করে পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরদের জানিয়েও নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়নি। মেয়র ও কাউন্সিলরদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফজলে মাহমুদ চাঁদ ও গোলাম মোস্তফা বলেন, পাকিস্তান আমলে এই জমিসহ আশেপাশের সকল জমিতে পতিতালয় ছিলো। পরে তাঁদের উচ্ছেদ করা হলে জমিগুলো সরকারের খাস খতিয়ানে ভুক্ত হয়। তার মধ্যে এই জমিটি বর্তমানে নওগাঁ পৌরসভার খাস সম্পত্তির মধ্যে পড়েছে। যার মূল্য কমপক্ষে ২ কোটি টাকা। অথচ এতো মূল্যবান সম্পদ রক্ষায় পৌর কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে সরকারের সব সম্পত্তিই ব্যক্তিমালিকানাধীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এবিষয়ে দখকারী লিটন ঘোষ ও তার স্ত্রী প্রশান্তি ঘোষ সম্পত্তিটি নিজেদের বলে দাবী করেন। তারা বলেন, পাকিস্তান আমল থেকেই জমিটির ভোগদখল আমরা করে আসছি। কিছু দোকানপাট করে নিয়মিত সেখান থেকে ভাড়া উত্তোলন করি। পৌরসভাকে ম্যানেজ করেই এখন স্থাপনা নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। এখানে কতটুকু জমি ব্যক্তিমালিকানা এবং কতটুকু খাস সেটা পৌরসভা বুঝবে। তাঁরা এসে দেখেও গেছে।
নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনি বলেন, কে বা কারা কোন সম্পত্তি দখল করছে এটা দেখবার মতো বাড়তি সময় আমার হাতে নেই। পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হয়। এসব দেখভালের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের দেয়া হয়েছে। জমিটি আদৌ পৌরসভার কি না? সেটিও আমার জানা নেই।
অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধে এলাকাবাসী মানববন্ধন করলেও এখনো কেনো বন্ধ করা হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান মেয়র।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি জানার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে ভূমি অফিস থেকে নায়েবকে পাঠিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র নিয়ে লিটন ঘোষকে রবিবার ভূমি অফিসে আসতে বলা হয়েছে। এরপরেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্মাণ কাজ চলমান রাখলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :