শাহ্ আলম লিটন ->>
‘বে ‘ অর্থ হীন আকার’ অর্থ কর্ম, অর্থাৎ বেকার অর্থ কর্মহীন। সেই বেকার, যে কাজ করার ইচ্ছা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বে ও কাজ করার সুযোগ পায় না। গত ২ ফেব্রুয়ারি পঞ্চমবারের মত জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিব নানান আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ২০১৮ সালে দেশে প্রথম বারের মত নিরাপদ খাদ্য দিবস পালিত হয়েছে।
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস পালনের মূল লক্ষ্যই হলো সর্ব শ্রেনি মানুষের স্বাস্হ্য ও জীবন সুরক্ষার জন্য খাদ্যপ্রাপ্তি অধিকার নিশ্চিত করা এবং সর্বস্তরে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাই প্রধান লক্ষ্য। ২২ সালের দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ সুস্বাস্হ্য মূলনীতি, নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্হ্যবিধি। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সে অনুযায়ী জনগনের জন্য নিরলস কাজ করে ও যাচ্ছেন।
কিন্তু একা তিনি কি করবেন। যেখানে ৬৮ হাজার গ্রাম বাংলার পথে – ঘাটে লক্ষ্য লক্ষ্য বেকার যুবক, শ্রমিক শ্রম বিক্রির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। উচ্চ শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা যখন কোন কাজ, চাকরি না পেয়ে চোখে – মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে বাবার কাধে বোঝা হয়ে থাকে,সেখানে যদি হয় বাবা শ্রমিক। তখন শান্তনার ভাষা হারিয়ে যায়। করোনার প্রভাবে নতুন করে স্কল কলেজ বন্ধ, এই স্কল কলেজের বইয়ের সাথে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ জড়িত। রাইটার, এডিটোর, টাইপরাইটার ( প্রি পেস), কাভার ছাপা, মেইন ছাপা, ( ভতরের ছাপা), ফর্মা প্রস্ততকারি, পেস্টিং, কাটিং, প্যাকেটং লেবার, পরিবহন লেবার, বাজার জাতকারি কর্মিসহ বিভিন্ন সেক্টর আছে, শ্রমিক ছাড়া কাজ হয় না। এ সব কাজে ভাটা পড়ার কারনে এখানকার শ্রমবাজারে ও ভাটা।
এর সাথে সারা বাংলাদেশে আর ও হাজার হাজার বই বিক্রেতা জড়িত, তাদের সাথে আছে তাদের শ্রমিক কর্মচারি। বই তেমন বিক্রি নেই।তবে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর করুন অবস্হা একদিনের নয়। সব সময়ের। করোনায় তাদের অবস্হা আরো করুন করে তুলেছে। করোনা শুরু থেকেই এমন হাল। দোকানি কর্মচারির সবার মাথায় হাত। তেমনি নিমাণকাজসহ বিভিন্ন কাজ সাময়িক বন্ধ রয়েছে। স্কল কলেজ বন্ধ থাকার কারনে রিকসা মিশুকে তেমন যাএি উঠেনা। সারাদিন তেমন কামাই হয় না। পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধহারে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। যে ভাড়া বাড়িতে থাকে, তার তো আর ও করুন অবস্হা। মাস শেষে বাড়ি ভাড়ার জন্য বাড়িওয়ালার রাগা রাগি কটু কথা শুনতে হয়। মা অসুস্হ, সন্তান অসুস্হ, নিজের শরীর দুর্বল। নানা রকম সমস্যার সম্মখীন হতে হয় একজন বেকার বা শ্রমজীবী ও তার কাছের মানুষগুলোকে।
একটার পর একটা করোনার ধাক্কা সামলাতে কত মানুষ অভাব অনটনে পড়ে আছে। একবেলা পেটপুরে খেতে পারলে ও আরেক বেলার খাবারের কথা চিন্তা করা যায় না। জীবন বা্ঁচাতে কত সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের। হত দরিদ্র মানুষ অভাব – অনটনে জর্জরিত হয়ে শেষ সন্ভল ভিটেমাটির বিক্রির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পরিবার পরিজনে, স্ত্রী সন্তানের মুখে হাসি মুখ দেখার জন্য মায়া ত্যাগ করে বিদেশ পারি দিয়ে ও স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে পারছে না। ধরে নিলাম, একজন শ্রমিক বর্তমান সময়ে সারা দিন কাজ করে ১ হাজার টাকা পরিশ্রমিক পায়। এই ১ হাজার টাকা তার চাল, ডাল, কাঁচা তরিতরকারি কিনতেই চলে যায়। তাহলে তার ঘর ভাড়া। ঔষদের খরচ, অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিস পএ কিনবে কোথায় থেকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে ছাড়া তো কমছে না।
আমরা জানি, শিক্ষাই জাতির মেরু দন্ড। শিক্ষা আমাদের জীবনকে করে সমৃদ্ধ। অন্ধকার থেকে আলোকে করে নিকটে। সেই শিক্ষাই যদি আবার বেকার শিক্ষিত ছেলে মেয়েকে বেকারত্বের অভিশপ্ত রাজ্যে কাটাতে হয়, তা হলে এক সময় রাষ্ট্র, সমাজ ব্যবস্হা কেমন হবে, তা কি কেউ ভেবে দেখেছে। এদেশে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার অনুপাতে কর্মসংস্হান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশের অষ্টম অবস্হান। আয়তনে ও ছোট। ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। ১৮ কোটির ও বেশি জনসংখ্যা।
বাংলাদেশ জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে বারোতম স্হান। শিক্ষার ব্যবস্হা ও বারোটা ঘরে ঝুলছে। সনদসর্বস্ব তথাকথিত শিক্ষিতের শিক্ষার হার যতই বাড়ছে, তারচেয়ে দ্রুত গতিতে বেকারত্বের সম্ভাবনা প্রশস্ত হচ্ছে। করোনায় অটো পাশ সনদসর্বস্ব আরো ভাবেচ্ছে। সৎ লোকের জন্য সামনের সময় বিপদজনক হয়ে উঠছে। দুর্নীতিবাজ, ধান্দাবাজ, ঘুষখোর, লুটেরা তাদের জন্য সব সময়ই পোয়া বারো। তাদের আয় ম্যাজিকের মতো দিন দিন বৃদ্ধি পায়। অবিশ্বাস্য ভাবে তারা ফুলে উঠছে। এখনো যে দেশের বেশির ভাগ মানুয তিন বেলা ই পেট খালি থাকে, ডিগ্রি, মাস্টার্স পাস ছেলেরা রিকসা চালক, ফেরিওয়ালা, হকার। খাবার মখে তুলে দিতে না পারার কারণে মা সন্তানের মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে নিজে ও বিষ পানে আত্ন হত্যা করছে। সে দেশে উন্নয়নের সূচক দিয়ে কি হবে।
করোনার সংক্রমন আবার ও বাড়তে শুরু করেছে। যে ভাবে সারা দেশে ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছে, আর যে ভাবে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছ, মানুষের মনে শঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অগনিত প্রান যাবে। আর্থিকভাবে ক্ষতি হবে সবাই। দিন দিন শিক্ষিত, অশিক্ষিত মেহনতি মানুষ বেকার হচ্ছে। হন্য হয়ে কাজ খুঁজছে। কোথায় কাজ? বিলাসিতা না হলো, দৈনদিন্দ চাল ডাল তরিতরকারি কেনার টাকাটা রোজগার করতে হবে। সন্তানে পড়া – লেখা না হয় শিকায় তুলা থাকলো। যেখানে সাধারন মানুষ গুলো সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বিলাসিতা, সন্তানের লেখা – পড়া শিকায় না তুলে উপায় কি? বেকার সমস্যার কারণ চিহ্নিত কঠিন একটি কাজ। বাস্তবমুখি চিন্তা ভাবনা, সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা ছাড়া বেকার সমস্যা সমাধান করা সন্ভব নয় ।
আগে বেকার সমস্যার কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। জন সংখ্যা অনুপাতে কর্মসংস্হান সৃষ্টি করতে হবে। কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। জনশক্তি রপ্তানি বাজার আরো সম্প্রসারণ করলে দেশের বেকারত্ব আরো হ্রাস পাবে ইসলামের দৃষ্টিতে কোন পেশাই নিন্দনীয় কাজ নয়। হালাল উপাজনের জন্য যে কোন পেশায় আত্ননিয়োগ করতে হবে। জেলে, কামার, কুমার , ছুতার, দর্জি । চুড়ি করা ছারা সব পেশাই বৈধ। সব পেশায়ই মুসলনানদের অংশ গ্রহন করতে হবে। কুরআন পাকে আল্লাহ তা’ আলা এরশাদ করেন, সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর ‘ ফজল’ অনুসন্ধান করো। ( সুরা জুমআ – ৯) মুফাসসিরে কেরাম বলেন, এ আয়াতের ‘ ফজল ‘ দ্বারা ব্যবসা – বানিজ্যের মাধ্যমে রিজিক সংগ্রহ করাকে বুঝানো হয়েছে। হোক না পথের পাশে, ফুটপাতে। সুতারাং বেকারত্ব দুর করার জন্য হালাল উপায়ে যে কোন একটি পেশা বা কাজ বেছে নিতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :