শরীয়তপুরে আদালতের নিষেধ অমান্য করে ব্যক্তি জমির উপর সরকারি রাস্তা
প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২, ২০২২, ৭:০৭ অপরাহ্ন /
১৫৭
আমির হোসেন (শরীয়তপুর প্রতিনিধি) ->>
শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার নলমুড়ি ইউনিয়নের চরমনপুরা জনৈক ইসমাইল পাইকের রেকর্ডীয় সম্পত্তিতে আদালতের নিষেধ অমান্য করে দোকান ঘর ভাংচুর করে সরকারি রাস্তা তৈরী করার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গোসাইরহাট নলমুড়ি ইউনিয়নের শরীফ মার্কেট থেকে চরমনপুরা পর্যন্ত একটি রাস্তা নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি। স্থানীয়দের অভিযোগ নির্মাণাধীন রাস্তা সরকারি রাস্তা দিয়ে না নিয়ে ব্যক্তি মালিকানার জমির উপর দিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে স্থানীয় ইসমাইল পাইকের প্রায় দশ শতাংশ জমি হারাতে হচ্ছে বলে তার ভাষ্য।
জমির মালিকানা দাবিদার ইসমাইল পাইক বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের আগ থেকেই তার বাব-দাদারা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ৩০ বছর আগে এখানে কোনো রাস্তা ছিল না। তাই তারা তাদের জমিতে ব্যক্তি উদ্যোগে চলাচলের জন্য একটি রাস্তা করে দিয়ে ছিলেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি এলজিইডি জমির মালিকদের উদ্যোগে নির্মিত রাস্তার উপর পাকা রাস্তা নির্মাণ শুরু করেছে; যদিও পাশ দিয়ে সরকারি রাস্তা নির্মাণ করার মতো সরকারি খাস জায়গা রয়েছে।
প্রশাসনের এই উদ্যোগে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইসমাইল পাইক।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের জমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ কাজের উদ্যোগ নিয়েছেন। বিষয়টি বারবার অবগত করার পরেও রাস্তার কাজ বন্ধ করা হয়নি।
“এলাকার সমস্ত লোকজন অবগত রয়েছে যে এটি আমাদের ব্যক্তি মালিকানার রাস্তা। তবুও সরকারি লোকজন আমাদের কোনো কথাই মানছে না।”
ইসমাইল পাইক আরো বলেন, “এদিক দিয়ে রাস্তা নেওয়ার মতো যদি সরকারি জায়গা না থাকত তাহলে আমরা আমাদের জমি দিয়ে রাস্তা দিতাম, কোনো সমস্যা ছিল না। সরকারি জায়গা থাকা সত্বেও কেন আমাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা তা কোনোভাবেই বুঝে উঠতে পারছি না। আমাদের দশলাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, “এই নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে ইউএনও স্যারকে সার্ভেয়ার দিয়ে রাস্তা মাপানোর সুপারিশ করা হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। ইউএনও স্যার উদ্যোগ নিলেই বিষয়টির সুন্দর একটি সমাধান হতে পারত।
আমরা আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করি যাহার নাম্বার ৯৪/২১ উক্ত মামলায় আদালত স্হিতিবস্তা রাখার আদেশ দেয়। কিন্তু আদালতের আদেশ অমান্য করে গত ০২/০৩/২০২২ তারিখে দোকান ঘর ভাংচুর করে ও মাটি খনন করে জমির রুপ পরিবর্তন করে।
এমতাবস্থায় আমরা গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার ভুমি, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রকৌশলী ও সাব ঠিকাদারের নামে মিস(ভায়োলেশন)৬৬/২০২২ মামলাটি দায়ের করি, উক্ত মামলা আদেশের জন্য রয়েছে।
এমতাবস্থায় উক্ত মিস(ভায়োলেশন) মামলার বিবাদীদের ইন্ধনে কিছু উশৃংখল লোকজন গতকাল ৩০/০৩/২০২২ সকালবেলা আমার সব দোকান ঘর ভাংচুর করে ও পাশে থাকা বহু পুরনো গাছপালা ভেঙে মাহিন্দ্র গাড়ী করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ও জুলহাস উদ্দিন বলেন, ইসমাইল পাইকরা ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে এখানে দোকান ঘর তৈরী করে বসবাস করছেন। রাস্তাটি তারা ব্যক্তি উদ্যোগেই চলাচলের জন্য তৈরি করেছিলেন। এখন সরকারি জায়গা থাকতেও তাদের না জিজ্ঞেস করেই রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় জরিপকারী আবুল কালাম বলেন, এখানে কিছুদিন পরপর জমি বিক্রি হয়। তাই তাকে জমি মেপে দিতে হয়।
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, নির্মাণাধীন রাস্তাটি ব্যক্তি মালিকানা জমির উপর দিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন ইচ্ছা করলেই তাদের জমি দিয়ে রাস্তা নিতে পারে।
এব্যাপারে গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে আপাতত রাস্তার কাজ বন্ধ রয়েছে, দোকান ঘর কারা ভেঙেছে এটা আমি বলতে পারবোনা, তবে আদালতের নিষেধ অমান্য করে এই কাজ যারাই করেছে তারা ঠিক করে নাই।
আপনার মতামত লিখুন :