ArabicBengaliEnglishHindi

জাজিরায় দুর্বৃত্তদের হামলায় শিক্ষক নিহত


প্রকাশের সময় : জুন ৮, ২০২২, ৮:০৪ অপরাহ্ন / ২০৯
জাজিরায় দুর্বৃত্তদের হামলায় শিক্ষক নিহত

শরীয়তপুর প্রতিনিধি ->>
শরীয়তপুর জাজিরায় সেনেরচর বি এম মোজাম্মেল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল মালত দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয়েছে।

মঙ্গলবার রাত ১০ টায় জাজিরার খোশাল শিকদার কান্দি এলাকায় নিজ বাড়ি ফেরার পথে ছালাম মালতের বাড়ির সামনে ব্রীজের উপর দিয়ে আসার সময় পথিমধ্যে তার উপর আক্রমণ করে এলোপাতারি ভাবে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয়রা আহত সাইফুল মালতকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে, অবস্থা গুরুতর হওয়ায়, জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু পথিমধ্যেই তিনি মারা যান।

বিষয়টি নিয়ে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহমুদুল হাসান জানান, রাত ১১টার সময় গুরুতর আহত অবস্থায় সাইফুল মালতকে আমাদের এখানে নিয়ে আসলে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। অবস্থার অবনতি দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নিহত সাইফুল মালত জাজিরা সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের খোশাল শিকদার কান্দি গ্রামের হাজী কিনাই মালতের ছেলে। তিনি সেনেরচর বি এম মোজাম্মেল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়াও তিনি স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

তিনি জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

স্থানীয় রাজনীতির বিরোধের জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে নিহত সাইফুল মালতের বড় ভাই শামছুল হক মালত।তিনি আরো জানান, আমার ভাই মারা যাওয়ার পূর্বে তার উপর যারা আক্রমণ করেছে তাদের মধ্যে থাকা কয়েকজনের নাম বলে গিয়েছে, যা তার সাথে থাকা হিরো শেখও জানেন।

নিহতের সঙ্গে থাকা পথসঙ্গী হিরো শেখ জানান, আমরা জাজিরা বাজার থেকে সাইফুল মালতের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম, পথিমধ্যে হামলাকারীরা আমাদেরকে আক্রমণ করলে আমি পালিয়ে চলে যাই। কিন্তু সাইফুল মালতকে তারা কুপিয়ে জখম করে।

নিহত সাইফুল মালতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার স্ত্রী মিতু আক্তার (৩৫) সহ বাড়িতে স্বজনদের আহাজারী। মিতু আক্তার বলেন, আমার স্বামী আমার সন্তান দুইটারে এতিম করে চলে গেলেন। নিহত সাইফুল মালতের একাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়া সুমাইয়া (১৭) ও দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া লাবিবা (১৫) নামে দুইটি মেয়ে রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জাজিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আঃ রহমান হাওলাদার জানান, এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির কথা শুনেই আমি দেখতে এসেছি। আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে কঠিন বিচার করা হোক।

অপরদিকে আক্রমণকারীরা সাইফুল মালতকে আহত করার পরে সাইফুল মালতের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে আক্রমণ করে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এতে করে মালেক মোল্লা নামে একজনের বাড়ির কয়েকটি ঘর পুড়ে যায়।

মালেক মোল্লা জানান, রাতে হামলাকারীরা আমার পাসের কয়েকটি বাড়িতে ভাংচুর করে এসে আমার বাড়িতেও ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ চালায়। আমার দুইটি ঘর পূড়ে ছাই হয়ে যায়। আমি বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দারস্থ হয়ে বিচার দাবি করবো।

এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে খোশাল শিকদার কান্দি এলাকার আলেম ফকিরের ছেলে সুজন ফকির (২৫) নামের একজনকে আটক করেছে জাজিরা থানা পুলিশ। রাতে খোশাল শিকদার কান্দি এলাকা থেকে সুজন ফকির নামক ব্যক্তিকে আটক করে জাজিরা থানা পুলিশ। এছাড়া এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমরা একজনকে আটক করেছি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি। মামলার প্রস্তুতি চলছে, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।