আশরাফুল আলম,দিনাজপুর প্রতিনিধি ->>
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী কমেছে সাড়ে ১৩ হাজার।
গত বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৭৯৫ জন। এবার পরীক্ষা দেয়ার কথা ১ লক্ষ ১ হাজার ৮৮২ জনের। সারা দেশের ন্যায় ৬ নভেম্বর, রবিবার থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বিভাগের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ৬৭৪ টি কলেজের শিক্ষার্থীরা ২০২ টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। এবার ছাত্রের সংখ্যা বেশি। গত বছর ছাত্রীর সংখ্যা বেশি ছিলো। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মোঃ তোফাজ্জুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এবার দিনাজপুরের ৪২ টি কেন্দ্রে ১৩০ টি কলেজের ১৯ হাজার ৮৬১ জন, ঠাকুরগাঁয়ের ২০ টি কেন্দ্রে ৬১ টি কলেজের ৯ হাজার ৩৯৭ জন, পঞ্চগড়ের ১২ টি কেন্দ্রে ৩৬ টি কলেজের ৬ হাজার ৩০৪ জন, নীলফামারীর ২৪ টি কেন্দ্রে ৯৩ টি কলেজের ১২ হাজার ১৮৯ জন, লালমনিরহাটের ১১ টি কেন্দ্রে ৫৯ টি কলেজের ৬ হাজার ৪৭৭ জন, রংপুরের ৩৯ টি কেন্দ্রে ১৩০ টি কলেজের ২২ হাজার ২৭১ জন, কুড়িগ্রামের ২৪ টি কেন্দ্রে ৮৬ টি কলেজের ১০ হাজার ৭৮৭ জন এবং গাইবান্ধার ৩০ টি কেন্দ্রে ৭৯ টি কলেজের ১৪ হাজার ৫৯৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২৪ হাজার ২৭৪ জন, মানবিক বিভাগ থেকে ৬৭ হাজার ২৮৭ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১০ হাজার ৩২১ জন পরীক্ষা দিবেন। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫১ হাজার ৩২২ জন ছাত্র এবং ৫০ হাজার ৫৬০ জন ছাত্রী। গত বছর ছাত্রের সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৬৯৯ জন এবং ছাত্রী ছিলো ৫৮ হাজার ৯৬ জন।
দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কামরুল ইসলাম বলেন , এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ২ ঘন্টা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ সময়ের মধ্যে ২০ মিনিট নৈর্ব্যক্তিক এবং ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এবার সাড়ে ১৩ হাজার পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ার পিছনে অপসংস্কৃতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়, প্রতিষ্ঠানে অনুশীলন ও চর্চার অভাবে আত্মপীড়ন ও আসক্তিমূলক কর্মকান্ডে আত্মনিয়োগ, হতাশা এবং বাল্যবিয়ের কারণে ঝরে পড়া। এছাড়াও শিক্ষার ব্যয়ভার বহনে ব্যর্থ হওয়া, প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল সহ অভিভাবক ও শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতাকে দুষছেন সচেতন শিক্ষাবিদরা।
রাবি’র দর্শন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা প্রাক্তন অধ্যাপক অবনীকান্ত বলেন, আশ্চর্যের ব্যাপার যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া সত্বেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়া উদ্বেগজনক! হাবিপ্রবি’র ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন ডিন প্রফেসর মো. নওশের ওয়ান বলেন, শিক্ষা উপকরণ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং কর্মহীন ও আয় কমে যাওয়া নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা সন্তানদের শিক্ষা ব্যয়সহ মৌলিক চাহিদাপূরণে ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। আবার শ্রেণীকক্ষে যথাযথ পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হতে হয়। একারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে শিক্ষকরা শিক্ষা ও অনুশীলনে শিক্ষার্থীদের ব্রতী করে গড়ে তোলার মতো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত না থেকে আত্মপীড়ন ও আসক্তিমূলক কর্মকান্ডে আত্মনিয়োগ করে হতাশাগ্রস্ত হয়ে ড্রপআউট হয়ে পড়ে। এসব ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সরকারের আলাদা পরিকল্পনা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি গাইড লাইনও থাকা দরকার। এছাড়াও অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে অনেকে। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে ঝরে পড়ার প্রবনতা বেশি।
আপনার মতামত লিখুন :