ArabicBengaliEnglishHindi

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে গনধর্ষন,গোপনীয়তা মেনে মিমাংসার আদেশ পরিচালকের


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ৭, ২০২২, ১০:৫১ অপরাহ্ন / ৩৫০
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে গনধর্ষন,গোপনীয়তা মেনে মিমাংসার আদেশ পরিচালকের

এস এম জীবন ->>

ঢাকা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বোটানিক্যাল গার্ডেনে এক পৈশাচিক গণধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়, মাত্র ৩ লাখ টাকায় ধামাচাপা দিয়েছেন গার্ডেনের পরিচালক জাহিদুর রহমান মিয়া। গত ১৭ অক্টোবর ওই ঘটনা ঘটলেও, তা তিনি প্রকাশ হতে দেননি। স্থানীয় থানা পুলিকেও পর্যন্ত বিষয়টি জানাননি তিনি।

গণ ধর্ষনের তিন দিন পর কয়েকটি টুকরো ভিডিও ফুটেজ পায় “দৈনিক জনতার বাংলা “অনুসন্ধানী প্রতিবেদক। তাতে দেখা গেছে, বোটানিক্যাল গার্ডেনের আনসার ক্যাম্পের একটি রুমের মধ্যে , একটি মেয়ে কিভাবে বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতর তিন জন নরপশু দ্বারা গণধর্ষনের শিকার হয়েছেন তার বর্ণনা দিচ্ছেন।

সেখানে তিনি স্পষ্ট করেছেন, তার বয়ফ্রেন্ডকে জিম্মি করে ধর্ষন করে নরপশুরদল।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছেন, দৈনিক জনতার বাংলার দেওয়া ছদ্ম নাম সুমী আক্তার তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ১৭ অক্টোবর সোমবার দুপুরের দিকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘুরতে আসেন মহাখালী থেকে। গার্ডেন পরিচালকের কার্যালয়ের ঠিক পেছনের দিকে জালিয়া ডাঙ্গা লেক পয়েন্টের খুবই জঙ্গলাকীর্ণ নিরজন স্থানে অন্তরঙ্গ মুহুর্তে ছিলেন সে ও তার বয়ফ্রেন্ড। ওই সময় তিন ব্যক্তি এসে তার বয় ফ্রেন্ডকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে জোরপূর্বক তাকে পালাক্রমে ধর্ষন করে।

বিষয়টি বোটানিক্যাল গার্ডেনের আনসার কমান্ডার কামরুল ইসলাম জানতে পেরে ধর্ষনের শিকার সুমি আক্তার (ছদ্মনাম) এবং ওই তিন ধর্ষক’কে ধরে তার ক্যাম্পের রুমে নিয়ে আসেন। এ সময় আনসার কমান্ডার যোগাযোগ করেন গার্ডেন পরিচালক জাহিদুর রহমান মিয়া’র সঙ্গে। জাহিদুর রহমান মিয়া বিষয়টি কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে মিমাংসা করে দেওয়ার নির্দেশ দেন আনসার কমান্ডার ও বাগান মালি সহিদুল ইসলাম বন প্রহরি মামুন সহ কর্মকর্তাদের কে।

আনসার কমান্ডার কামরুল ইসলাম, ভিকটিম মেয়েটির বক্তব্য শোনার পর ধর্ষক মিন্টু, জাকির এবং জহিরুল কে দিয়ে ক্ষমা চাওয়ান। কিন্তু তাতে রাজি হননি মেয়েটি। এরপর তিন লাখ টাকায় দফারফা করেন আনসার কমান্ডার সহ উপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। মেয়েটিকে এক লাখ টাকা এবং বাকি দুই লাখ টাকা গার্ডেন পরিচালকের দফতর এবং আনসারের লোকজন বাটোয়ারা করে নেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। এবং মেয়েটির কাছ থেকে এক প্রকার জোর করেই সাদা কাগজে লিখিত নেওয়া হয়, এই বলে যে এখানে কোনো ধর্ষনের ঘটনা ঘটেনি।

মেয়েটি লিখিত দেওয়ার পর চরম হতাশা ব্যক্ত করেন যা ভিডিও চিত্রে স্পষ্ট অনুভূত হয়। এই তিন লাখ টাকার ধর্ষনকান্ড ধাপাচাপা দেওয়ার মূল কারিগর ছিলেন বোটানিক্যাল গার্ডেনের মালি সহিদুল এবং বন প্র্রহরি মামুন মিয়া। মেয়েটি যখন তার বয়ান দিচ্ছিলেন তখন আনসার ক্যাম্পের সেই রুমে ভিকটিম মেয়েটির ঠিক সামনে চৌকিতে বসা ছিলেন বন প্রহরি মামুন।

ধর্ষকদের মধ্যে একজন বনমালি সহিদুলের ভাগ্নে মিন্টু বলে জানা গেছে। মিন্টু সহিদুলকে মামা বলে ডাকেন এবং এই ধর্ষক গ্যাংটি প্রায়ই বোটানিক্যাল গার্ডেনে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে থাকেন বলে জানা গেছে। ধর্ষক গ্রুপটি গার্ডেনের পাশের এলাকার বাসিন্দা এবং তারা সারাদিন এই গার্ডেনের মধ্যে থেকেই অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে অর্থ আয় করেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

এই গ্রুপগুলোর সঙ্গে গার্ডেনের এক শ্রেনীর কর্মকর্তা কর্মচারি জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। এমনকি ধর্ষকদের একজন নিজেকে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে ধর্ষন করেছে বলে বলতে শোনা যায়, তারা এই গার্ডেনেরই কর্মচারি বলে ধারনা করা হচ্ছে।

এই গনধর্ষনের বিষয়ে গার্ডেনের পরিচালক জাহিদুর রহমনা মিয়া’র কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন এরকম কোনো ঘটনা গার্ডেনে ঘটেনি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তার নির্দেশে তিন লাখ টাকায় ধর্ষনের ঘটনা ধামা চাপা দেওয়া হয়নি বলেও জানান। অথচ আনসার কমান্ডার কামরুল ইসলাম বারবার বলছিলেন, গার্ডেন পরিচালকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে। তিনিই সব বলতে পারবেন বলে জানান। কমান্ডার কামরুল ইসলামও প্রথমে ধর্ষন এবং তার রুমে আপোস রফাদফার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে পরে স্বীকার করেন যে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। কারা কারা ঘটনা স্থলে ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বারবারই পরিচালকের অফিসে এসে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।

আনসারের মহাপরিচালকের দফতর থেকে এই বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছিল। আনসার কমান্ডার কামরুল ইসলাম সেই তদন্তে মিথ্যা বয়ান দিয়েছেন। এছাড়াও বন ও পরিবেশ অধিদফতরের প্রধান বন সংরক্ষক বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিলেন তবে গার্ডেন পরিচালকের বিরুদ্ধে কেউ তদন্ত করতে রাজি নয়। কিন্তু কেনো এবং কি কারণে গার্ডেন পরিচালক এতো ক্ষমতাধর যে, গণধর্ষনের মতো গুরুত্বর ফৌজদারি অপরাধ মাটিচাপা দিয়ে বহাল তবিয়তে থাকেন। এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।বিস্তারিত আগামী সংখ্যায়