জাহিদুর রহমান (বকুল) –
বিশিষ্ট কলামিস্ট লেখক ও কালজয়ী গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে আমরা শোকাভিভূত। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাত বাসী করুন। ভাষা আন্দোলন বাঙালির প্রথম প্রতিবাদ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রথম যুদ্ধের দামামা, ভাষা আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে নব জাগরণে উদ্দীপ্ত হয়েছিল, কবি সাহিত্যক, বুদ্ধিজীবিরা। চেতনার আগুনে বাঙালির মনে জাগিয়ে তোলে প্রজ্জ্বলিত আলোর মশাল, ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত অধ্যায়ের সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত যে গানটি বাংলায় লক্ষ কোটি বার উচ্চারিত হয়েছে সেই গানটির জন্য ইতিহাসের পাতায় , আব্দুল গাফফার চৌধুরী জায়গা করে নিয়েছে।
যা সেই উত্তাল দিনে কবিতা রক্তের সিঁড়ি পেরিয়ে কবিতার চরণ হয়ে উচ্চারিত হয়েছিল গেণ্ডারিয়া ধুপখোলার মাঠে যুব লীগের এক উন্মুক্ত অনুষ্ঠানে। আব্দুল লতিফের সুরে প্রথম গানটি গেয়েছিলেন আতিকুল ইসলাম, এখন যে সুরে বাংলার আকাশ বাতাস অনুরণিত হয় সেই গানটির সুর করেছিলেন আলতাফ মাহমুদ। ১৯৫৩ সালে শহীদ দিবসে ঢাকা কলেজের এক অনুষ্ঠানে ওই গানটি গেয়ে এবং শহীদ মিনার তোলার অপরাধে কয়েকটি ছেলে বহিষ্কার হয়। ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস হতে ১/৪ ডিমাই সাইজের ৪ পৃষ্ঠার একটি প্রচার পত্র প্রকাশিত হয়, এই স্মরণিকা প্রকাশিত হয়েছিল ‘একুশের গান’ শিরোনামে।
আমরা তখন একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরীতে বিমোহিত কন্ঠে গেয়ে যেতাম “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি ”
আমাদের বুকের মাঝে জেগে উঠে জাতীয় চেতনার বিকাশ, সংগ্রাম করার সাহস, গনতান্ত্রিক চেতনা , জেগে উঠে রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপট।
পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী এক তরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাঙালির কন্ঠরোধ করতে চেয়েছিল,যার কোন যুক্তিকতা ছিল না।
আজ স্বল্প পরিসরে ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানের ভাষা ভিত্তিক জাতি গোষ্ঠীর অবস্থান তুলে ধরা হলো। শতকরা হিসেবে ৫৬.৪০ জন বাংলা ভাষায় কথা বলতো, ২৮.৫৫ জন পাঞ্জাবি ৩.৪৭জন পশতু ভাষায় , ৫. ৪৭ জন সিন্ধু ভাষায়,৩.২৭জন উর্দু ভাষায়,১.২৯ জন বেলুচ ভাষায় কথা বলতো। এই নির্মম অন্যায় বাঙালিরা মেনে নিতে পারেনি, বঙ্গবন্ধু সহ খ্যাতিমান অনেককেই কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ করা হয়, বাঙালিরা পাকিস্তানের হীন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো, ভাষাকে বাঁচাতে বুকের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করলো বাংলার অকুতোভয় দামাল ছেলেরা। ১৯৫২ এর একুশের ভাষা আন্দোলন নিয়ে বহু কালজয়ী কবিতা, সাহিত্য, গল্প রচিত হয়েছে, সেই সব কবিতা, গান এর মধ্যে মাথা উচু করে,যে গানটি বাঙালির হৃদয়ের জমিনে শিকড় গেড়ে বসেছে,সেই গান বা কবিতা টি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস গ্রন্থ থেকে লেখনির মাধ্যমে আবার মানুষের মনের মনিকোঠায় আনার চেষ্টা করলাম। শুধু আমি নয় বাংলার মানুষ যতবারই এই গানটি গেয়েছে ততবারই মানুষের অনুভূতির দরজায় চেতনা, শক্তি সাহস,অনুপ্রেরণার প্রজ্জ্বলিত দ্বীপ শিখা আঘাত ও মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে। সেই কালজয়ী আবদুল গাফফার চৌধুরীর গান মানুষের চেতনার পরশ জাগ্রত করতে তুলে ধরলাম।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে
ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলতে পারি ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু -গড়া এ ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলতে পারি আমার সোনার দেশের রক্ত রাঙানো ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি।
জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো
কাল বোশেখীরা শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা, দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী দিন বদলের ক্রান্তি তবু তোরা পার পাবি? না,না, না,না,রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।। সেদিনো এমনি নীল গগনের বাসনে শীতের শেষে রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিলো হেসে; পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা আলকনন্দা যেনো, এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো ক্ষ্যাপা বুনো।। সেই আঁধারে পশুদের মুখ চেনা, তাহাদের তরে মায়ের বোনের,ভায়ের চরম ঘৃণা ওরা গুলি ছোড়ে এ দেশের প্রাণে দেশের দাবীকে রোখে ওদের ঘৃন্যপদঘাত এই বাংলার বুকে ওরা এ দেশের নয়, দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয় ওরা মানুষের অন্ন,বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি একুশে ফেব্রুয়ারী একুশে ফেব্রুয়ারী।। তুমি আজ জাগো তবু আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারী আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী আমার শহীদ ভাইয়ের আত্ম ডাকে জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাঁকে দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারী একুশে ফেব্রুয়ারী একুশে ফেব্রুয়ারী”।। আমরা গর্বিত জাতি, কারন পৃথিবীর ইতিহাসে আমরাই একটি মাত্র জাতি যে মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছি, এবং আমরাই সর্বোচ্চ রক্তের দামে স্বাধীনতার লাল সবুজের পতাকা অর্জন করেছি।
আপনার মতামত লিখুন :