নওগাঁ প্রতিনিধি ->>
সীমান্তের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে সাপাহার উপজেলা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানের হাজারো পর্যটকদের প্রিয় পর্যটনকেন্দ্র জবই বিল। বর্ষা মৌসুমে পানির জোয়ারে ফুলে-ফেঁপে ওঠে এই বিল। যেন নব যৌবন ফিরে পায় জবই বিল।
বর্তমানে খরা মৌসুম হবার ফলে যৌবন হারিয়ে নুব্জ হয়ে পড়েছে বিলটি। চারিদিকে ধানের ক্ষেত ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনা। শুধু বয়ে যাওয়া একটি একটি নালাতে রয়েছে ঘোলা পানি। যার ফলে গেল ঈদুল ফিতরে দর্শনার্থী সঙ্কটে পড়েছে বিলটি। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর ঈদে দর্শনার্থীর সংখ্যা ৩০শতাংশ কম বলছেন স্থানীয়রা। যার ফলে স্থানীয় ব্যাবসায়ী ও নৌকার মালিকরা লোকসানের মধ্যে পড়েছেন। এমতাবস্থায় বিলের একটি নির্দিষ্ট স্থান জুড়ে পাখির অভয়ারণ্য ও ইকো ট্যুরিজম পার্কের জরুরী বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের মতে উত্তরে ভারত বর্ষের দক্ষিন দিনাজপুর জেলা, দক্ষিনে চাঁপাই নবাব গঞ্জের মহানন্দা নদী ও পুর্নভবা নদী এবং পূর্ব ও পশ্চিমে সাপাহার উপজেলাকে দু’ভাগে বিভক্ত করে বয়ে যাওয়া দিগন্ত ছোঁয়া এই বিলে অতিতে প্রতি শীত মৌসুমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সহ সুদুর সাইবেরিয়া হতে হাজারো অতিথি পাখীর আনাগোনায় মুখরিত হয়ে থাকত পুরো বিল এলাকা। জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা এ বিলে সেসময় পাখী শিকারে তেমন কোন বাধ্যবাধকতা না থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এমনকি রাজধানী ঢাকা শহর হতে সাহেবরা এসে পাখী শিকার করত এই বিলে।
সেসময় সারা বিল জুড়ে ছিল অসংখ্য কচুরী পানা বিলের অধিকাংশ এলাকায় পানির দেখা মিলতানা। সারা বছরে খরা মৌসুমে একবার বিলে মাছ ধরা হত, সেসময় ২০কেজি ৩০কেজি এমনকি এক দেড়মন ওজনের শৌল,বোয়াল কাতলা সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পড়তে জেলেদের জালে। দেশ স্বাধীনের পর পর মধ্যবর্তী সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে জাল যার জলা তার নিতী ঘোষনা করায় এলাকার কিছু সংখ্যক অসাধু স্বার্থন্বেষী মানুষ বিলটিকে আবাদি জমিতে পরিণত করার উপায় অলম্বন করে বিল থেকে সমস্ত কচুরীপানা অপসারণ করে ফেলে বিলটিকে মৎস্যশূন্য ও আবাদি জমিতে পরিণত করেন। এর পর থেকে বিলে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য মাছ ধরা পড়তনা জেলেদের জালে এবং প্রতিবছর শীত কালে পরিযায়ী বা অতিথি পাখিরাও আসা বন্ধ করে ওই বিলে।
এর পর এলাকার অভিজ্ঞ মহল ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরা জানান গত ১৯৯৬সালের দিকে তৎকালিন ও বর্তমান প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এক সরকারী সফরে সাপাহারে এলে পুরো বিলটিকে একটি মৎস্য প্রকল্পের অধিনে এনে এলাকার প্রকৃত মৎস্যজিবীদের ভাগ্য উন্নয়নে একটি বৃহত প্রকল্পের ঘোষনা দেন। সেথেকে বিল পাড়ের প্রকৃত মৎস্যজিবীদের নিয়ে একটি সমিতি তৈরী করে তার সকল সদ্যরা বিলটি দেখা শুনার করে সেখান থেকে মৎস্য আহরণ করে তাদের জিবীকা নির্বাহ করে আসছে। এসব বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারের পর বিল দেখার জন্য বাড়তে থাকে পর্যটক। মুক্ত হাওয়া নিতে বিল প্রাঙ্গনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।
অপরদিকে প্রতিবছর দুই ঈদ ও পুজা সহ ছুটির দিনগুলোতে এই বিলে ভীড় করেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই বিল দেখার জন্য আসেন পর্যটকরা। আগের ঈদ গুলো ভরা বর্ষ মৌসুমে হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা বেশি ছিলো। পর্যটকরা বিলের উপর নৌকা বা স্পিডবোটে ঘুরে খেতে পারতো পুরো বিল এলাকা। বর্তমান সময়ে বিলে পানি না থাকায় দর্শনার্থী সঙ্কটে পড়েছে সমুদ্র সৈকত খ্যাত জবই বিল।
ঈদে জবই বিলে ঘুরতে আসার রেজাউল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, স্ব-পরিবারে বিলে ঘুরতে এসছি। এই বিলে দেখার মতো তেমন কিছু নেই। যদি পানি থাকতো তাহলে সবাই মিলে মজা করে নৌকাতে ঘুরতে পারতাম।
অপর দর্শনার্থী বলেন, একে তো পানি নেই অপর দিকে দর্শনার্থীদের জন্য বসার কোন ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের দাঁড়িয়ে থেকে বিল দেখতে হচ্ছে। এই বিলের মধ্যে যদি ইকো ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলা হতো তাহলে আমরা আরো মুগ্ধ হতাম এছাড়াও দর্শনার্থী বাড়তো।
জবই বিল জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান সহ এলাকার অভিজ্ঞজনদের মতে ভবিষ্যতে বিলে দেশী ও পরিযায়ী পাখির আবাধ বিচরণ ধরে রাখতে পরিকল্পিত ভাবে বিলের কোন এক অংশে একটি বিশেষ পাখির জীববৈচিত্র সংরক্ষিত অঞ্চল গড়ে তুলতে পারলে দেশের বৃহত্তম ও অন্যতম জীববৈচিত্রে ভরপুর সহ পর্যটন সমৃদ্ধ বিল হিসেবে পরিচিত পাবে ঐতিহ্যবাহী জবই বিল।
এবিষয়ে সাপাহার উপজেলার নির্বাহী অফিসার আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, বিলটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের খাদ্যমন্ত্রী নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারই সহযোগীতায় ইতোমধ্যে বিলে অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ভবিস্যতে বিলটির আরো উন্নয়ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :