সিলেট প্রতিনিধি ->>
অবশেষে সিলেটে ৭২৭ কোটি টাকা ব্যায়ে কুমারগাঁও-এয়ারপোর্ট সড়কের উন্নয়নের কাজ শুরু হচ্ছে। শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে ৭২৭ কোটি টাকা ব্যায়ে ৪ লেনে উন্নীত ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন। এর নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ২ বছর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সড়কটির কাজের উদ্বোধনের জন্য ইতোমধ্যে তেমুখী পয়েন্টে উদ্বোধনী ফলক নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই সড়কের মইয়ারচর- সোনাতলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় প্রকল্পের সাইট অফিস ও শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৪ জানুয়ারী ‘কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ’ প্রল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এ অনুমোদন পায়। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৭২৭ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়কটি বর্তমানে বেহাল অবস্থায়। প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি নির্মাণ করা হয় ২০১২-১৪ অর্থ বছরে। পরবর্তীতে পাথরবাহী ট্রাক চলাচল, বিমানবন্দর অভিমুখীদের সুবিধা এবং পর্যটকবাহী যান চলাচলের জন্য সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি উঠে। এর প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। ২০১৭ সালে ৪ লেন সড়কের সাথে দুটি সার্ভিস লেন যুক্ত করে তৈরি করা হয় সংশোধিত প্রস্তাবনা। ২০১৯ সালে ৪ লেনের প্রস্তাবনা জমা পড়ে মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু কোন এক অর্দৃশ্য শক্তির কারণে বছরের পর বছর ধরে আটকে থাকে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির কাজ। শেষ পর্যায়ে সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে সড়কটি সম্প্রসারণের দাবি ওঠে। সাধারণ মানুষও এ দাবির সাথে একাত্ম হন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সর্বশেষ মেয়াদে সরকার গঠনের পর সিলেট-১ আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে গতি আনার চেষ্টা করেন। ২০২০ সালের ৮ আগস্ট সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সড়কটি পরিদর্শন করেন। তারা সড়কটির বাস্তব অবস্থা ও আগের প্রস্তাবিত নকশা পর্যবেক্ষণ করেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেট কর্তৃক তৈরিকৃত প্রস্তাবিত ৪ লেনের নকশায় ত্রুটি থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রতিনিধি দলের প্রধান সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের তৎকালীন যুগ্ম প্রধান জাকির হোসেন। তিনি দ্রুত অভিজ্ঞ সার্ভেয়ার দল নিয়োগ করে ডিজিটাল সার্ভে (টিবিএম) দিয়ে সংশোধিত নকশা তৈরি করতে সওজ সিলেট কার্যালয়কে নির্দেশ দেন। উক্ত প্রতিনিধি দল নগরীর রায়নগরে সওজের রেস্টহাউজে রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে সড়কটির অবস্থা নিয়ে মতবিনিময় করেন।
প্রতিনিধি দলের প্রধান জাকির হোসেন সেখানে বলেন, ‘বাইপাস সড়কটির বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্যই আমরা সিলেটে এসেছি। আমাদের পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট দফতরে জানাবো। আগের প্রস্তাবিত নকশা সংশোধনের মাধ্যমে সড়কটির পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে। এতে ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে। আর ৬ মাসের মধ্যে কাজ শুরু হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
তবে শেষ পর্যন্ত ৬ মাসের মধ্যে কাজ আর শুরু হয়নি। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপিত হয়ে অনুমোদন পায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক ৪ লেন করার বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি প্রস্তাবনা আসে। ঐ বছরের ২৫ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে আসা সুপারিশ গুলো প্রতিপালন করার পর গত বছরের শেষ দিকে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করেছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে উল্লেখ হয়েছে, কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা মহাসড়ক। সড়কটি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াতের প্রধান ও একমাত্র বিকল্প পথ। একইসঙ্গে সড়কটি সিলেট শহরের যানজট এড়ানোর জন্য বাণিজ্যিক যানবাহনের ডাইভারশন হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সড়কটি সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ৬ কিলোমিটার কুমারগাঁওয়ে শুরু হয়ে বাদাঘাট হয়ে ওসমানী বিমানবন্দর সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে। বাদাঘাট লিংক রোডসহ সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৭৮০ কিলোমিটার এবং বিদ্যমান প্রস্থ ৫ দশমিক ৫০ মিটার।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বহুল প্রতিক্ষিত কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট ৪ লেন সড়কের প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২৭ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, সড়কের বাঁধে মাটির কাজ, সয়েল ট্রিটমেন্ট, রিজিড, ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট, ইন্টারসেকশন উন্নয়ন, পিসি গার্ডার সেতু এবং আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। শনিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় রাস্তার নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হবে। ইতোমধ্যে তেমূখী পয়েন্টে নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী ফলক নির্মাণ করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :